রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২

মায়েদের ঘটনা পড়ুন



=0= মায়েদের ঘটনা পড়ুন =0=

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “বনী ইসরাইল বংশে দুজন মহিলা ছিল। তাদের সাথে তাদের দুটি শিশু সন্তানও ছিল। হঠাৎ একদিন একটি বাঘ এসে একজনের শিশুটি নিয়ে গেল। তখন বাকি শিশুটি উভয় মহিলা দাবি করতে লাগলো। একজন আর এক জনকে বলতে লাগলো বাঘে তোমার শিশুটিই নিয়েছে। অতঃপর উভয় মহিলা হযরত দাউদের (আঃ) নিকট এ বিরোধ মীমাংসার জন্য বিচার প্রার্থী হলো। একজন মহিলা ছিল বয়স্কা, অপরজন অল্প বয়স্কা। বয়স্কা মহিলার কথা বিশ্বাস করে দাউদ (আ.) শিশুর ব্যাপারে বয়স্কা মহিলাটির পক্ষে রায় দিলেন। মহিলা দুজন আদালত কক্ষ হতে বের হয়ে সুলাইমান (আঃ) সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। অল্প বয়স্ক মহিলাটি কাঁদছিল (কারণ সন্তানটি তারই ছিল)। সুলাইমান আঃ মামলার বিবরণ জানতে চাইলো। তারা তাঁকে মামলার বিবরণ শোনাল। তখন তিনি লোকজনকে বললেন, “তোমরা আমার কাছে একখানা ছোরা নিয়ে আস। আমি শিশুটি কেটে দ্বি-খণ্ডিত করে তাদের দুজনের মধ্যে ভাগ করে দেব।একথা শুনে কম বয়স্কা মহিলাটি বলে উঠলো,“না, এরূপ করবেন না। আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। আমি মেনে নিচ্ছি শিশুটি তারই।তখন সুলাইমান আঃ কম বয়স্কা মহিলার পক্ষেই রায় দিলেন।” 

(সহীহ আল বুখারী)

কেয়ামত কেমন হবে?



কেয়ামত কেমন হবে?
পবিত্র কুরআনে প্রতিশ্রুত কেয়ামতের দৃশ্য

১. না। আমি শপথ করছি (মহা বিশ্বের বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ভয়ংকর সেই) কিয়ামত দিবষের।
২. আর না। আমি শপথ করছি...তিরস্কারকারী নফসের।
৩. মানুষ কি মনে করে যে, (মরনের পর) আমি তার হাড় সমুহ একত্র করতে পারবো না ?
৪. কেন পারব না ? আমি তো তার আংগুলের জোড়াগুলো পর্যন্ত পূর্ন বিন্যস্ত করতে সক্ষম।
৫. (বিষয়টি অনুধাবন করার পরও) মানুষ ভবিষ্যতে মন্দকর্ম করতে চায়।
৬. (হে নবী আপনাকে বিব্রত করার জন্য অবিশ্বাসীরা) প্রশ্ন করে কখন আসবে প্রতিশ্রুত সেই কেয়ামত দিবষ ?
৭. (বলুন) অতপর মানুষের চক্ষু সমুহ (বন্ধ না হয়ে) যখন স্থির হয়ে যাবে।
৮. (সূর্যের পতনের ফলে) চন্দ্র যখন আলোহীন হয়ে যাবে।
৯. এবং চন্দ্র সূর্যকে একত্রিত করে (এক মহাবিষ্ফোরনের মাধ্যমে) ধ্বংশ করে দেওয়া হবে।
১০. (ভয়ংকর এই ধংশলীলা দেখে) সেদিন মানুষ বলতে থাকবে এখন পালাবার জায়গা কোথায় ?
১১. কখনো না, সেদিন (মানবজাতীর জন্য দুনিয়ায়) কোন আশ্রয় স্থল থাকবে না।
১২. সেদিন তোমার রবের সামনেই (সমগ্র মানবজাতীকে) জীবন কর্ম নিয়ে দন্ডায়মান হতে হবে।
১৩. সেদিন মানুষকে তার পূর্বের এবং পরের কৃত কর্মগুলো জানিয়ে দেওয়া হবে।
১৪. যদিও মানুষ নিজের আমল সমুহকে ভাল ভাবেই জানে (আসলে সে কি দুনিয়ায় করে এসেছে)
১৫. সে (নিজের মন্দ আমল সমুহের ব্যপাড়ে) যতই অজুহাত পেশ করুক না কেন।
১৬. হে নবী। এ অহীকে আয়ত্ব করার জন্য তোমার জিহবাকে দ্রুত নাড়াচাড়া করোনা।
১৭. (পবিত্র এই কুরআন তোমাকে) মুখস্ত করিয়ে দেয়া আমারই দায়িত্ব।
১৮. তাই যখন কুরআন উচ্চারিত হয় তখন গভির মনযোগ দিয়ে তুমি শ্রবন করবে।
১৯. অতপর পবিত্র কুরআনের অর্থ সমুহ অনুধাবন করানো আমারই দায়িত্ব।
২০. কখনো না। আসলে তোমরা দ্রুত লাভ করা যায় জাগতিক এমন বস্তুকেই ভালবাস।
২১. এবং (ইহলোকের মোহে পরে) তোমরা আখেরাতের (অনন্ত অসীম জীবনকে) উপেক্ষা করে থাক।
২২. মহা বিচারের সেই (ভয়ংকর) দিন অল্প সংখ্যক চেহারা সজীব থাকবে।
২৩. তারা তাদের মহান রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে।
২৪. আর কিছু সংখ্যক লোক থাকবে হতাসা গ্রস্থ (এবং চেহারা থাকবে) বিবর্ণ।
২৫. (আমলনামায় পর্যাপ্ত পাপ থাকায় তারা সুনিশ্চিত হবে) তাদের সঙ্গে আজ অত্যান্ত কঠোর আচরন করা হবে।
২৬. কখনো না। যখন মানুষের প্রান কন্ঠনালীতে এসে পরবে (ফলে তাদের অন্তর ফেটে পরার উপক্রম হবে)
২৭. এবং তারা বলতে থাকবে (কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য) এখন ঝাড় ফুক করার কেহ আছে কি ?
২৮. (ভয়ংকর সেই অন্তিম মুহুর্তে) মানুষ জেনে যাবে এখনই দুনিয়া থেকে অনন্ত বিদায় নেওয়ার সময়।
২৯. সেদিন মানুষের উভয়ের পায়ের গোছা একত্রিত হয়ে (এক জায়গায় স্থির হয়ে) যাবে।
৩০. সেদিন হবে তোমাদের মহান রবের নিকট অনন্ত যাত্রা করার দিন।
৩১. কিন্তু (হতভাগ্য মানুষ এই ভয়ংকর দিনের কথা জেনেও) সত্যকে অনুসরন করেনি এবং নামাজ আদায় করেনি।
৩২. বরং (অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর হুকুম মানতে অস্বীকার করেছে এবং নামাজ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
৩৩. তারপর সে দম্ভভরে (মহান ররেব হুকুম অমান্য করে) পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে গিয়েছে।
৩৪. এই আচরন তোমার মত পাপিষ্টের জন্যই শোভনীয় এবং খোদার সঙ্গে এহেন বিদ্রোহ তোমার ক্ষেত্রেই মানায়।
৩৫. মানুষ কি (নির্ভয়ে থেকে) মনে করে নিয়েছে (সেদিন তার আমলের বদলা না দিয়েই) তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে ?
৩৬. (সৃষ্টির সূচনালগ্নে) সে কি তুচ্ছ এক বিন্দু পানি ছিল না ?
৩৭. অতপর সে মাংসপিন্ডে পরিনত হয়। তারপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন।
৩৮. তারপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নরনারী (কোন প্রকার বৈজ্ঞানিক উপকরন ছাড়াই)
৩৯. (বিষ্ময়কর এতগুলো কর্ম সংঘটিত করার পরও) তিনি কি মৃত মানুষ পূনরায় জীবিত করতে অক্ষম ? সূরা কেয়ামাহ

আমার মা-যে কথাটি হয়নি বলা



আমার মা-যে কথাটি হয়নি বলা

বিয়ের ২১ বছর পর আমার স্ত্রী আমাকে বলল অন্য একজন মহিলাকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে খেতে নিয়ে যেতে। সে বলল, “আমি তোমাকে ভালবাসি, কিন্তু আমি জানি এই মহিলাটিও তোমাকে ভালবাসেন এবং তিনি তোমার সাথে একান্তে কিছু সময় কাটাতেও ভালবাসবেন।

আমার স্ত্রী যার সাথে আমাকে বাইরে যেতে বলছিল, তিনি ছিলেন আমার মা, যিনি ১৯ বছর আগে বিধবা হয়ে গেছেন; কিন্তু আমার কাজের চাপ আর তিন সন্তানের দায়িত্বের কার...
নে শুধু কোন উপলক্ষ হলেই তার সাথে আমার দেখা হওয়া সম্ভব হত।

সেই রাতে আমি মাকে ফোন করে একসাথে বাইরে বেড়াতে খেতে যাওয়ার আমন্ত্রন জানালাম। তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘কি ব্যপার বাবা, তুমি ভাল আছ তো?’

আমার মা হলেন এমন একজন মানুষ যিনি গভীর রাতে ফোন কল বা আকস্মিক দাওয়াতকে কোন দুঃসংবাদ বলে আগাম আশঙ্কা করেন। মায়ের প্রশ্নে আমি বললাম, ‘ভাবছি তোমার সাথে কিছু ভাল সময় কাটাবো মা। শুধু তুমি আর আমি।তিনি এক মুহূর্ত ভাবলেন, তারপর বললেন, “এমন হলে আমার খুবই ভাল লাগবে বাবা।

কাজ শেষে সেদিন যখন ড্রাইভ করে মাকে তুলে নিতে গেলাম, কিছুটা নার্ভাস বোধ করছিলাম। যখন সেখানে পৌঁছলাম, খেয়াল করলাম, তিনিও যেন এভাবে দেখা করার জন্য কিছুটা নার্ভাস। তিনি রেডি হয়ে দরজার কাছেই অপেক্ষা করছিলেন। তার চেহারা ছিল দ্যুতিময় হাসি। গাড়িতে উঠতে উঠতে তিনি বললেন, ‘আমি আমার বন্ধুদের বলেছি যে আমি আমার ছেলের সাথে বেড়াতে যাচ্ছি; তারা শুনে খুবই খুশী হয়েছে। আমাদের সাক্ষাতের বর্ণনা শোনার জন্য তারা অধীর ভাবে অপেক্ষা করছে।

আমরা যে রেস্তোরাঁয় গেলাম, সেটা খুব দামী না হলেও বেশ ভাল আর আরামদায়ক ছিল। আমার মা আমার বাহু ধরে ছিলেন, যেন তিনি একজনফার্স্ট লেডী বসার পরে আমাকেই মেনু পড়ে শোনাতে হল। তিনি শুধু বড় লেখা পড়তে পারতেন। অর্ধেক পড়ে শোনানোর পর মুখ তুলে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি তাকিয়ে শুধু আমাকে দেখছেন। তার ঠোঁটে এক নস্টালজিক হাসি। তিনি বললেন, ‘তুমি যখন ছোট ছিলে, আমাকে মেনু পড়ে শোনাতে হত।আমি বললাম, ‘এখন তাহলে সময় এসেছে যেন তুমি আরাম কর আর আমাকে সুযোগ দাও তোমার সেই কষ্টের প্রতিদান কিছুটা হলেও দেওয়ার।

খেতে খেতে আমরা সাধারন নিত্যনৈমিত্তিক কথা বার্তা বললাম- বিশেষ কিছু না, জীবনের নতুন নতুন ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী একজন আরেকজনকে জানালাম। আমরা অনেকক্ষন গল্প করলাম। পরে যখন মাকে তার বাসায় নামিয়ে দিচ্ছিলাম, তিনি বললেন- “আমি তোমার সাথে আবার বেড়াতে যাব, কিন্তু দাওয়াতটা আমি দেব।আমি রাজী হলাম।

যখন ঘরে ফিরলাম, আমার স্ত্রী প্রশ্ন করল, ‘তোমার সাক্ষাত কেমন কাটল?’ জবাব দিলাম, ‘ভীষণ ভাল, আমি যেমন ভেবেছিলাম তার চেয়েও অনেক ভাল।

কিছুদিন পর আমার মা হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন। এটা এমন আকস্মিকভাবে ঘটলো যে তার জন্য আমার কোন কিচ্ছু করার সুযোগও হল না। কিছুদিন পর একটা খাম আসলো আমার কাছে। ভেতরে একটা সেই রেস্তোরাঁর রিসিট যেখানে মাকে নিয়ে খেতে গিয়েছিলাম। সাথে একটি ছোট্ট চিঠি, তাতে লেখা-

আমি এই বিলটি অগ্রিম আদায় করে দিয়েছি, জানিনা তোমার সাথে আবার সেখানে যেতে পারতাম কিনা; যাইহোক আমি দুই জনের খাবারের দাম দিয়ে দিয়েছি- একটা তোমার আরেকটা তোমার স্ত্রীর জন্য। তুমি কখনও বুঝবে না সেই রাতটি আমার জন্য কত বিশেষ ছিল। তোমাকে অনেক ভালবাসি বাবা।

সেই মুহূর্তে আমি বুঝতে পারলাম, সময়মতভালোবাসিকথাটা বলতে পারা এবং প্রিয় মানুষগুলোকে কিছুটা একান্ত সময় দেওয়া কতটা জরুরী। জীবনে নিজের পরিবারের চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সময়টুকু দিন, কারন এগুলো কখনওপরে কোন এক সময়এর জন্য ফেলে রাখা যায় না।

আল্লাহ যেন আমাদের সবার মাদেরকে যারা জীবিত আছেন এবং মারা গেছেন, তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে তাদের জন্য দয়া, ধৈর্য এবং ভালবাসা দান করেন। "রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়া-নি সগীরা"

মায়ের সাথে থাক, কারন জান্নাত তাঁরই পদতলে” (ইবনে মাজাহ, সুনান, হাদিস নং ২৭৭১)

প্রকাশনায়ঃ কুরআনের আলো ওয়েবসাইট