কোরআনের গল্প-story from Quran

কোরআনের গল্প-story from Quran লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কোরআনের গল্প-story from Quran লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

উযাইর আলাইহিস সালাম এর ঘটনা


উযাইর আলাইহিস সালাম এর ঘটনা


প্রশ্ন: আমি উযাইর আলাইহিস সালাম এর ঘটনা জানতে চাই। তাঁর ক্ষেত্রে আলাইহিস সালাম বলা কি ঠিক হবে? তিনিই কি সে ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তাআলা একশ বছরের জন্য মৃত্যু দিয়ে আবার পুনর্জীবিত করেছেন; যেমনটি সূরা বাকারাতে উদ্ধৃত হয়েছে?

উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
উযাইরবনী ইসরাইলের একজন নেককার ব্যক্তি। তিনি নবী কিনা- তা সাব্যস্ত হয়নি। যদিও প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে- তিনি নবী। ইবনে কাছীরবিদায়া নিহায়াগ্রন্থে (/২৮৯) এটাই ব্যক্ত করেছেন।
সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি জানি না- তুব্বা কি লানতপ্রাপ্ত; নাকি নয়। আমি জানি না- উযাইর কি নবী; না কি নবী নয়।” [আলবানি হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
শাইখ আব্বাদ বলেন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কথা বলেছেন তাদের (তুব্বা সম্প্রদায়) অবস্থা জানার আগে। যেহেতু মর্মে রেওয়ায়েত এসেছে যে, তুব্বা সম্প্রদায় ইসলাম গ্রহণ করেছে। সুতরাং তারা লানতপ্রাপ্ত নয়। পক্ষান্তরে, উযাইর নবী কিনা ব্যাপারে কোন রেওয়ায়েত আসেনি।[শরহে আবু দাউদ (২৬/৪৬৮) থেকে সমাপ্ত]
তবে তাঁর ক্ষেত্রেআলাইহিস সালামবলতে কোন সমস্যা নেই। যেহেতু তিনি নেককার মানুষ ছিলেন। তাঁর ঘটনা কুরআনে এসেছে। আলেমদের অনেকে তাঁকে নবী হিসেবে গণ্য করেছেন।
আরও জানতে 152887 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।
দুই:
আল্লাহ তাআলা বলেন: “অথবা সে ব্যক্তির মত, যে এমন এক জনপদ অতিক্রম করছিল যা তার ছাদের উপর থেকে বিধ্বস্ত ছিল। সে বলল, মৃত্যুর পর কিভাবে আল্লাহ একে পুনর্জীবিত করবেন? অতঃপর আল্লাহ তাকে একশ বছর মৃত অবস্থায় রাখলেন। তারপর তাকে পুনর্জীবিত করলেন। আল্লাহ বললেন, ‘তুমি কতকাল এভাবে ছিলে?’ সে বলল, একদিন বা একদিনেরও কিছু কম সময়। তিনি বললেন, বরং তুমি একশত বছর অবস্থান করেছ। এবার চেয়ে দেখ নিজের খাবার পানীয়ের দিকে সেগুলো অবিকৃত রয়েছে এবং দেখ নিজের গাধাটির দিকে। আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে চেয়েছি। হাড়গুলোর দিকে চেয়ে দেখ, আমি কিভাবে সেগুলোকে সংযুক্ত করি এবং গোশত দ্বারা ঢেকে দেই। অতঃপর যখন তার নিকট স্পষ্ট হলো তখন সে বলে উঠল- ‘আমি জানি, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান[সূরা বাকারা, আয়াত: ২৫৯]
প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী এই ব্যক্তি হচ্ছেন- উযাইর। ইবনে জারির ইবনে আবু হাতিম ইবনে আব্বাস, হাসান, কাতাদা, সুদ্দি সুলাইমান বিন বুরাইদা থেকে অভিমতটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে কাছির বলেন: এই উক্তিটি প্রসিদ্ধ।[তাফসিরে ইবনে কাছির (/৬৮৭) থেকে সমাপ্ত]
সংক্রান্ত মতভেদ জানতে দেখুন ইবনুল জাওযি (/২৩৩) এরযাদুল মাসির
বুখতানাসসারনামক ব্যক্তি উল্লেখিত গ্রামটিকে ধ্বংস করে ফেলার পর গ্রামবাসীকে হত্যা করার পর উযাইর সে গ্রাম দিয়ে -প্রসিদ্ধ মতে সেটি বাইতুল মুকাদ্দাস- অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তখন সে গ্রামটি ছিল বিরান; তাতে কেউ ছিল না। গ্রামটি জনবহুল থাকার পর এখন এর যে অবস্থা তা নিয়ে তিনি ভাবতে ভাবতে বললেন: “মৃত্যুর (ধ্বংসের) পর কিভাবে আল্লাহ একে পুনর্জীবিত করবেন?” ধ্বংস বিরানতার ভয়াবহতা এবং পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসাকে দুরহ দেখে তিনি কথা বলেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতঃপর আল্লাহ তাকে একশ বছর মৃত অবস্থায় রাখলেন।এর মধ্যে শহরটি আবার পুনর্জীবিত হয়ে উঠেছে, লোকে লোকারণ্য হয়েছে, বনী ইসরাইলগণ শহরে ফিরে এসেছে। এরপর আল্লাহ যখন তাকে পুনর্জীবিত করলেন তখন সর্বপ্রথম তার চোখ দুইটিকে জীবিত করলেন যাতে করে সে আল্লাহর সৃজন ক্ষমতাকে দেখতে পায়, কিভাবে আল্লাহ তার দেহকে পুনর্জীবিত করেন। যখন তার গঠন পূর্ণ হল তখন আল্লাহ তাকে বললেন -অর্থাৎ ফেরেশতার মাধ্যমে- ‘তুমি কতকাল এভাবে ছিলে?’ সে বলল, একদিন বা একদিনেরও কিছু কম সময়। তাফসিরকারগণ বলেন: যেহেতু সে মারা গিয়েছিল দিনের প্রথমাংশে; আর তাকে পুনর্জীবিত করা হয়েছে দিনের শেষাংশে। যখন সে দেখল এখনো সূর্য আছে সে ভেবেছে এটি সে দিনেরই সূর্য। তাই সে বলেছে: “একদিনেরও কিছু কম সময়”  “তিনি বললেন, বরং তুমি একশত বছর অবস্থান করেছ। এবার চেয়ে দেখ নিজের খাবার পানীয়ের দিকে সেগুলো অবিকৃত রয়েছে বর্ণিত আছে তার সাথে আঙ্গুর, ত্বীন ফল শরবত ছিল। সে এগুলোকে যেমন রেখে মারা গিয়েছিল ঠিক তেমনি পেল। কোন পরিবর্তন হয়নি। শরবত নষ্ট হয়নি, আঙ্গুর পচেনি, ত্বীন গন্ধ হয়নি।এবং দেখ নিজের গাধাটির দিকে অর্থাৎ তাকিয়ে দেখ তোমার চোখের সামনে আল্লাহ কিভাবে সেটিকে পুনর্জীবিত করেন।আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে চেয়েছি অর্থাৎ পুনর্জীবিত করার পক্ষে প্রমাণ বানাতে চেয়েছি।হাড়গুলোর দিকে চেয়ে দেখ, আমি কিভাবে সেগুলোকে সংযুক্ত করিঅর্থাৎ একটি হাড্ডির সাথে অন্য হাড্ডিটি জুড়ে দেই। প্রত্যেকটি হাড্ডিকে স্ব স্থানে স্থাপন করে একটি ঘোড়ার কংকাল বানান; তাতে কোন গোশত ছিল না। এরপর হাড্ডির উপর গোশত, স্নায়ু, রগ চামড়া পরিয়ে দেন। সবকিছু করেছেন উযাইর এর চোখের সামনে। এভাবে যখন তার সামনে সবকিছু পরিষ্কার হলো তখন সে বলে উঠল- ‘আমি জানি, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান অর্থাৎ এটি জানি। আমি তা সচক্ষে দেখেছি। আমার যামানার লোকদের মধ্যে আমি বিষয়ে সবচেয়ে ভাল জানি।[দেখুন: তাফসিরে ইবনে কাছির (/৬৮৭-৬৮৯)]
আরও জানতে দেখুন 12350 নং  132236 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহই ভাল জানেন।







রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫

প্রাচীনকালে আরবে মেয়েদের জীবিত কবর দেবার এ নিষ্ঠুর পদ্ধতি: জঘন্য প্রথাটি নিমূল করেছে ইসলাম


প্রাচীনকালে আরবে মেয়েদের জীবিত কবর দেবার নিষ্ঠুর পদ্ধতি: জঘন্য প্রথাটি নিমূল করেছে ইসলাম
ইসলামের অবদান শিক্ষা: মেয়েদের লালন পালন করা নেকীর কাজ

যখন জীবিত পুঁতে ফেলা মেয়েকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে,(আত তাকবীর, ৮-৯

এই আয়াতের বর্ণনাভংগীতে মারাত্মক ধরনের ক্রোধের প্রকাশ দেখা যায় এর চেয়ে বেশী ক্রোধের কল্পনাও করা যেতে পারে না যে বাপ মা তাদের মেয়েকে জীবিত পুঁতে ফেলেছে আল্লাহর কাছে তারা এত বেশী ঘৃণিত হবে যে , তাদেরকে সম্বোধন করে একথা জিজ্ঞেস করা হবে না , তোমরা এই নিষ্পাপ শিশুটিকে হত্যা করেছিলে কোন অপরাধ বরং তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে ছোট্ট নিরপরাধ মেয়েকে জিজ্ঞেস করা হবে , তোমাকে কোন অপরাধে মেরে ফেলা হয়েছিল জবাবে সে নিজের কাহিনী শুনাতে থাকবে  

জালেম বাপ মা তার প্রতি কি অত্যাচার করেছে এবং কিভাবে তাকে জীবিত পুঁতে ফেলেছে সে কথা সে সবিস্তারে বর্ণনা করতে থাকবে ছাড়া এই ছোট্ট আয়াতটিতে দু'টি বড় বড় বিষয়বস্তু সংযোজিত করা হয়েছে জন্য কোন শব্দের আশ্রয় গ্রহণ ছাড়াই শুধুমাত্র বর্ণনাভংগী থেকে তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে এক , এর মধ্যে আরববাসীদের মনে এই অনুভূতি জাগাবার চেষ্টা করা হয়েছে যে , জাহেলীয়াত তাদেরকে নৈতিক অবনতি এমন নিম্নতম পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দিয়েছে যার ফলে তারা নিজেদের সন্তানকে নিজ হাতে জীবিত অবস্থায় মাটির মধ্যে প্রোথিত করার কাজ করছে এরপরও তারা নিজেদের এই জাহেলী কর্মকাণ্ডকে সঠিক মনে করে তার ওপর প্রতিষ্ঠত রয়েছে এবং মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের এই বিকৃত সমাজ জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য যে সংস্কার মূলক কর্মসূচী এনেছেন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে দুই , এর মধ্যে আখেরাতের অপরিহার্যতার ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট যুক্তি পেশ করা হয়েছে যে মেয়ে জীবিত অবস্থায় মাটির মধ্যে প্রোথিত করা হয়েছে তার প্রতি অন্যায়ের বিচার কোথাও হওয়া দরকার এবং যেসব জালেম এই জুলুমের কাজটি করেছে এমন একটি সময় আসা দরকার যখন তাদের এই নিষ্ঠুরতার জন্য তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে যে মেয়েটিকে মাটির মধ্যে পুতে ফেলা হয়েছে তার ফরিয়াদ শুনার মতো তখন তো দুনিয়ার কেউ ছিল না জাহেলী সমাজ ব্যবস্থায় কাজটিকে সম্পূর্ণ বৈধ করে রাখা হয়েছিল , বাপ মা জন্য একটুও লজ্জিত হতো না পরিবারেও কেউ তাদের নিন্দা তিরস্কার করতো না সমগ্র সমাজ পরিবেশে একজনও জন্য তাদেরকে পাকড়া করতো না তাহলে আল্লাহর প্রভুত্ব কর্তৃত্বের অধীনে এই বিরাট জুলূম অন্যায়ের কি কোন বিচার হবে না

প্রাচীনকালে আরবে মেয়েদের জীবিত কবর দেবার নিষ্ঠুর পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। এর বিভিন্ন কারণ ছিল। এক , অর্থনৈতিক দুরবস্থা এই দুরবস্থার দরুন লোকেরা চাইতো খাদ্যের গ্রহণকারীর সংখ্যা কম হোক এবং তাদের লালন পালনের বোঝা যেন বহন করতে না হয়। পরবর্তীকালে অর্থ উপার্জনে সহায়তা করবে এই আশায় ছেলেদের লালন পালন করা হতো। কিন্তু মেয়েদের ছোটবেলায় লালন পালন করে বড় হয়ে গেলে বিয়ে দিয়ে অন্যের ঘরে পাঠিয়ে দিতে হবে , কারণে মেরে ফেলে দেয়া হতো। দুই , দেশের আইন শৃংখলার ক্ষেত্রে সাধারণ নিরাপত্তাহীনতার কারণে এটা মনে করে পুত্রসন্তানের প্রতিপালন করা হতো যে , যার যত বেশী ছেলে হবে তার তত বেশী সাহায্যকারী হবে। অন্যদিকে গোত্রীয় সংঘর্ষ যুদ্ধের সময় মেয়েদের সংরক্ষণ করতে হতো এবং তারা প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে কোন কাজেই লাগতো না। তিন , আইন শৃংখলার ক্ষেত্রে সাধারণ দুরবস্থার কারণে শত্রুগোত্ররা পরস্পরের ওপর আতর্কিত হামলা করার সময় প্রতিপক্ষ শিবিরের যতগুলো মেয়েকে হামলাকারীরা লুটে নিয়ে যেতো , তাদেরকে বাঁদী বানিয়ে রাখতো অথবা কোথাও বিক্রি করে দিতো এসব কারণে আরবে কোথাও সন্তান প্রসবকালেই মায়ের সামনেই একটি গর্ত খনন করে রাখা হতো। মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তখনই তাকে গর্তে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দেয়া হতো আবার কোথাও যদি মা এতে রাজী না হতো বা তার পরিবারের কেউ এতে বাধ সাধতো তাহলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাপ কিছুদিন তাকে লালন পালন করতো। তারপর একদিন মরুভূমি , পাহাড় বা জংগলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে কোথাও তাকে জীবিত কবর দিয়ে দিতো। এই ধরনের রেওয়াজ আরবের বিভিন্ন এলাকায় প্রচলিত ছিল  

ক্ষেত্রে শিশু কন্যাদের সাথে কেমন নির্দয় ব্যবহার করা হতো তার একটি কাহিনী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাহাবী একবার তাঁর কাছে বর্ণনা করেন। সুনানে দারামির প্রথম অধ্যায়ে হাদীসটি উদ্ধৃত হয়েছে। এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তার জাহেলী যুগের একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন : আমার একটি মেয়ে ছিল। সে আমাকে খুব ভালোবাসতো তার নাম ধরে ডাকলে সে দৌড়ে আমার কাছে আসতো একদিন আমি তাকে ডাকলাম। তাকে সাথে করে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। পথে একটি কূয়া পেলাম। তার হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে কূয়ার মধ্যে ফেলে দিলাম। তার যে শেষ কথাটি আমার কানে ভেসে এসেছিল তা ছিল , হায় আব্বা ! হায় আব্বা ! একথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেঁদে ফেললেন। তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে একজন বললেন : ওহে , তুমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শোকার্ত করে দিয়েছো তিনি বললেন : থাক তোমরা একে বাধা দিয়ো না। যে বিষয়ে তার কঠিন অনুভূতি জেগেছে সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করতে দাও। তারপর তিনি তাকে বললেন : তোমার ঘটনাটি আবার বর্ণনা করো। সেই ব্যক্তি আবার তা শুনালেন ঘটনাটি আবার শুনে তিনি এত বেশী কাঁদতে থাকলেন যে , চোখের পানিতে তাঁর দাড়ি ভিজে গেলো এরপর তিনি বললেন জাহেলী যুগে যা কিছু করা হয়েছে আল্লাহ তা মাফ করে দিয়েছেন। এখন নতুন করে জীবন শুরু করো।

একথা মনে করা ভুল হবে যে , আরববাসীরা এই চরম অমানবিক কাজটি কদর্যতার কোন অনুভূতিই রাখতো না। কোন সমাজ যত বেশী বিকৃতই হোক না কেন তা কখনো এই ধরনের জুলুম অমানবিক কাজকে একেবারেই অন্যায় মনে করবে না , এমনটি কখনই হতে পারে না। তাই কুরআন মজীদে এই কাজটির কদর্যতা দূষণীয় হওয়া সম্পর্কে কোন লম্বা চওড়া ভাষণ দেয়া হয়নি। বরং কতিপয় লোমহর্ষক শব্দের মাধ্যমে কেবল এটুকু বলেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে যে , এমন এক সময় আসবে যখন জীবিত পুঁতে ফেলা মেয়েকে জিজ্ঞেস করা হবে , কোন দোষে তোমাকে হত্যা করা হয়েছিল আরবের ইতিহাস থেকে জানা যায় , জাহেলী যুগে অনেক লোকের এই রীতিটির কদর্যতার অনুভূতি ছিল। তাবারানীর বর্ণনা মতে কবি ফারাযদাকের দাদা সা'সা ' ইবনে নাজীয়াহ আলমুজাশেই রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করে, যে আল্লাহর রসূল ! আমি জাহেলী যুগে কিছু ভালো কাজও করেছি। এরমধ্যে একটি হচ্ছে , আমি তিনশ ষাটটি মেয়েকে জীবিত কবর দেয়া থেকে রক্ষা করেছি। তাদের প্রত্যেকের প্রাণ বাঁচাবার বদলে দু'টি করে উট বিনিময় মূল্য হিসেবে দিয়েছি। আমি কি এর প্রতিদান পাবো জবাবে তিনি বলেন : তোমার জন্য পুরস্কার রয়েছে এবং সে পুরস্কার হচ্ছে , আল্লাহ তোমাকে ইসলামের নিয়ামত দান করেছেন।

আসলে এটি ইসলামের একটি বিরাট অবদান ইসলামের কেবলমাত্র আরবের এই নিষ্ঠুর জঘন্য প্রথাটি নিমূল করেনি বরং এই সংগে মেয়ের জন্ম যে একটি দুর্ঘটনা এবং অনীচ্ছা সত্ত্বেও একে গ্রহণ করে নিতে হয় এই ধরনের চিন্তা ধারণারও চিরতরে অবসান ঘটিয়েছে বিপরীত পক্ষে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে ,মেয়েদের লালন পালন করা , তাদেরকে উত্তম দীক্ষা দেয়া এবং ঘর সংসারে কাজে পারদর্শী করে গড়ে তোলা অনেক বড় নেকীর কাজ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাপারে মেয়েদের সম্পর্কে মানুষের সাধারণ ধারণা যেভাবে পরিবর্তন করে দেন হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে তা আন্দাজ করা যাবে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ আমি নীচে কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত করছি :

"এই মেয়েদের জন্মের মাধ্যমে যে ব্যক্তিকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয় , তারপর সে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করে তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার কারণে পরিণত হবে। " ( বুখারী মুসলিম )

"যে ব্যক্তি দু'টি মেয়ের লালন পালন করে , এভাবে তারা বালেগ হয়ে যায় , সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে ঠিক এভাবে আসবে একথা তিনি নিজের আঙুলগুলো একসাথে করে দেখান "

" যে ব্যক্তি তিন কন্যা বা বোনের লালনপালন করে , তাদেরকে ভালো আদব কায়দা শেখায় এবং তাদের সাথে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করে , এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা তার সাহায্যের মুখাপেক্ষী না থাকে , তার জন্য আল্লাহ জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন : যে আল্লাহর রসূল ! আর যদি দু'জন হয় জবাব দেন , দু'জনকে এভাবে লালন পালন করলে তাই হবে। হাদীসের বর্ণনাকারী ইবনে আব্বাস ( রা) বলেন , যদি লোকেরা সে সময় একজনের লালন পালন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো তাহলে তিনি একজনের সম্পর্কেও এই একই জবাব তিনি দিতেন। " ( শরহুস সুন্নাহ )
"যার কন্যা - সন্তান আছে , সে তাকে জীবিত কবর দেয়নি , তাকে দীনহীন লাঞ্ছিত করেও রাখেনি এবং পুত্রকে তার ওপর বেশী গুরুত্বও দেয়নি , আল্লাহ তাকে জান্নাতে স্থান দেবেন " ( আবু দাউদ)

"যার তিনটি কন্যা আছে , সেজন্য সে যদি সবর করে এবং নিজের সামর্থ অনুযায়ী তাদেরকে ভালো কাপড় পরায় , তাহলে তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ে পরিণত হবে। " ( বুখারীর আদাবুল মুফরাদ ইবনে মাজাহ )

" যে মুসলমানের দু'টি মেয়ে থাকবে , সে যদি তাদেরকে ভালোভাবে রাখে , তাহলে তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। " ( ইমাম বুখারীর আদাবুল মুফরাদ )

" নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরাকাহ ইবনে জা'শূমকে বলেন , আমি কি তোমাকে বলবো সবচেয়ে বড় সাদকাহ ( অথবা বলেন , বড় সাদকাগুলোর অন্যতম ) কি সুরাকাহ বলেন , অবশ্যই বলুন হে আল্লাহর রসূল ! তিনি বলেন তোমার সেই মেয়েটি যে ( তালাক পেয়ে অথবা বিধবা হয়ে) তোমার দিকে ফিরে আসে এবং তুমি ছাড়া তার আর কোন উপার্জনকারী থাকে না। " ( ইবনে মাজাহ বুখারী ফিল আদাবিল মুফরাদ)

এই শিক্ষার ফলে মেয়েদের ব্যাপারে কেবল আরবদেরই নয় দুনিয়ার অন্যান্য যেসব জাতি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে তাদের সবার দৃষ্টিভংগীই বদলে গেছে