Short story:ছোট গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Short story:ছোট গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১২

জিয়ানার আনন্দ-অভিমান


জিয়ানার আনন্দ-অভিমান
(www.kishorkanthabd.com/ মাসিক কিশোরকন্ঠ থেকে সংগৃহীত)

 
মাত্র বার পার হয়ে তেরতে পা দিয়েছে জিয়ানা। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। কত আদর-স্নেহ-ভালোবাসা। নানু বলেন, চোখের মণি। মামারা বলে, মানিক সোনা। ছোট্টবেলা থেকে এই আজ পর্যন্ত জিয়ানার এমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই যা দুঃখকে বহন করে। ফুরফুরে এ আনন্দময় জীবন।

ও মা-বাবার সঙ্গে মাঝে মাঝে নানু বাড়ি যায়। ওর নানুবাড়ি একটি নদীর পাড়ে। নদীর নাম মহানন্দা। আনন্দ যেন কেবল ছুঁই ছুঁই করে। ঢেউগুলো মৃদু বাতাসে খেলা করে ঠিক ঘাসফড়িংয়ের মতো। ঘাস নেই, পানিতেই আছড়ে পড়ে। লগি-বৈঠায় ঢেউগুলো ভেঙে ভেঙে আবার ছড়িয়ে যায় দূরে। এই মহানন্দা নদী বেয়ে ওদের নৌকা চলে। তারপর নানু বাড়ির ঘাট। নানু পথ চেয়ে থাকেন। মা সঙ্গে থাকলে জিয়ানাকে তেমন কিছু বলে না। 

দুষ্টুমি করলেও না। কারণ মামারা সঙ্গে থাকে। জিয়ানা থাকে মামাদের দখলে।
এবার পিন্টু মামা এবং ইশতি মামা ওদের নিতে এসেছে। স্কুল বন্ধ। বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে গেছে। তাই যেতে কোনো বাধা নেই। প্রজাপতির মতো নাচতে থাকে সে। বাবা এলেই সব ঠিক হবে আর কোনো কথা নয়।

জিয়ানা তার ছোট্ট ব্যাগে দুচারটি জামা ভরে নেয় এবং সাজের বাক্সটি। মা সব দেখছেন তবে কিছু বলছেন না। জিয়ানা বলল, মা তুমি ব্যাগ গুছাবে না?

জিয়ানার এত অস্থিরতা মায়ের তেমন ভালো লাগছিল না। একটু ভেজা সুরে বললো, জিয়ানা তুমি এখন বড় হয়েছ না? এত অস্থির অস্থির কর কেন? তোমার বাবা আসুক। জিয়ানা একটু কষ্ট পেল।
মা এমন করে বললো, কেন। এতদিন পর পিন্টু মামা, ইশতি মামা এসেছে সে আনন্দ করবে না? বড় হলে কি আনন্দ করতে নেই? জিয়ানা বললো, মা তোমার কি মন খারাপ?
না, কেন?

তবে তুমি রাগ করে কথা বললে কেন?
না, রাগ করে নয় মা। তোমার বাবা আসুক তো! বাবা কি মানা করবে মা?
না, মানা করবে কেন? তুমি তো ছোট তাই সব বোঝ না। বাবার অফিসে অসুবিধা থাকতে পারে।

চিন্তায় পড়লো জিয়ানা। তবে কি এবার যাওয়া হবে না। এরই মধ্যে বাবা এলো। দৌড়ে গেল জিয়ানা। বাবার হাত ধরে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো, তোমাকে সারপ্রাইজ দেব বাবা।
কী সারপ্রাইজ মা?
পিন্টু মামা, ইশতি মামা ঠিক চলে এসেছে। আমার পরীক্ষা শেষ হয়েছে না? নানুবাড়ি যাবো, তাই না বাবা?
হ্যাঁ দেখি তোমার আম্মু কী বলে।

জিয়ানা ভাবছে এত দেখাদেখির কী আছে। ও মামাদের কাছে ভিড়ে বসে মামা আমরা কবে যাবো?
এই তো। তোমার আব্বুর সঙ্গে কথা বলি। এত কি কথা বলাবলি মামা?
অভিমান করে উঠে যায় পড়ার টেবিলে। গল্পের বই নিয়ে নাড়াচাড়া করে। খাবার সময় হলে মা ডেকে বলে, জিয়ানা খেতে এসো মা।

সবই ঠিক আছে। কিন্তু জিয়ানার মনের কষ্ট কমছে না। নানুবাড়ি যাবার বিষয়টি কেউ নির্দিষ্ট করে কিছু বলছে না। ভাবছে সেও আর বলবে না।
খেতে বসে জিয়ানা।

মামাদের গল্পে গল্পে জানতে পারে বাবার ছুটি হবে না। জরুরি কাজকর্ম নিয়ে মহাব্যস্ত। কদিন পর না হয় যাবে।

মামাদের ইচ্ছা অন্তত জিয়ানাকে নিয়ে যায়। আম্মার এক কথা না, ওর একা যাওয়া ঠিক হবে না। জিয়ানা বললো, আব্বু একটা কাজ করলে হয় না? তোমার অফিসের বড় সাহেবকে বলতে পার নানুকে দেখতে যাওয়া খুব জরুরি। সিরিয়াস অসুখ।
বাবা বললেন, মিথ্যে বলতে হয় না মা। তোমার নানু তো এখন সুস্থ আছেন।

শেষ পর্যন্ত মাকে নিয়ে জিয়ানা মামাদের সঙ্গে গেল। বাবা থাকলেন অফিসের কাজ নিয়ে। এতে জিয়ানা খুব খুশি না হলেও গেল আর কি। নৌকা এগোচ্ছে নানুবাড়ির দিকে।
বাবার সঙ্গেই জিয়ানার অন্তরঙ্গতা বেশি। বাবাকে সব বলা যায়।

মাকে সব বলতে তার ভালো লাগে না। আগে যখন বাবার সঙ্গে যেত, বাবা তাকে অনেক মজার মজার গল্প বলতো। সিন্দাবাদের কাহিনীগুলোতো সে এমনি নৌকায় যেতে যেতে বাবার মুখ থেকেই শুনে ফেলেছিল। তাছাড়াও ওই আকাশ, দূরের গ্রাম, ধানের ক্ষেত, পশু-পাখি সম্পর্কে কত কথা! এলিস ইন দি ওয়ান্ডারল্যান্ড ও আঙ্কেল টমস কেবিন দুটো গল্পও বাবার মুখ থেকেই শোনা। কত প্রশ্ন সে করেছে। কত মজার মজার বিষয় সে জানতে পেরেছে। ভাবছে এবার ভ্রমণটা মাটি হয়ে গেল।

তবু মামাদের মজার মজার কিছু কথায় জিয়ানা আনন্দ খুঁজে নিতে চেষ্টা করছে। মা নৌকায় ঘুমিয়ে পড়েছে।

জিয়ানা পানিতে হাত রেখে ঢেউ নিয়ে খেলছে। পানিফল তুলতে চাচ্ছে। পাশের নৌকায় খাঁচায় পাখি নিয়ে যাচ্ছিলো এক ব্যবসায়ী। এমনি পাখি নেব, পাখি নেববলে জিয়ানার কী চিৎকার!

পিন্টু মামা বললো, মা আমার সেই ছোটটি রয়েছে। ইশতি দেখ না, পাখি কেনা যায় কি না। নৌকা ভিড়িয়ে খাঁচাশুদ্ধ ছয় ছটি পাখি কিনলো ইশতি। ছোট্ট মুনিয়া পাখি। জিয়ানার আনন্দ দেখে কে। পিন্টু মামা ভাবছে, জিয়ানা আমাদের কোন দিন বড় হবে না। ওর ছেলেমানুষিই আমাদের আনন্দ। দেখতে দেখতে নৌকা ঘাটে লেগেছে। লাফাতে লাফাতেই নামলো জিয়ানা। মা কঠিন স্বরে বললো, এত লাফাচ্ছো কেন? এত অস্থির হয়ো না জিয়ানা। তুমি তো এখন আর ছোটটি নও। চাঁদ আর মেঘের খেলার মতো জিয়ানার মনে ঢেউ খেলে যায় আনন্দ আর অভিমান। ও কি এতই বড় হয়ে গেছে? এই মুহূর্তে সে ভাবলো, ও বড়ই হতে চায়। স্থির হতে চায়।

নানু দেখে বলে, জিয়ানার এত চেঞ্জ? সরল রেখার মতো আনন্দ-অভিমানের স্রোতস্বিনী বয়ে যায় মনে মনে। জিয়ানাকে বুকে টেনে নেয় নানু। মামী, মামাতো ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন সকলের মেলা বসে গেছে।

জিয়ানা এখন খুব খুশি। পাখিগুলো তার সব কষ্ট দূর করে দিয়েছে। মনের খুশিতে ওরা নেচে-গেয়ে ফুর ফুর করছে। আনন্দ আসলে খুঁজেই নিতে হয়। কষ্ট নিয়ে থেকে লাভ কী!
জিয়ানা একজন বড় মানুষের মতো তা বুঝে নিয়েছে।

লিখেছেন: বেগম রাজিয়া হোসাইন

মঙ্গলবার, ১ মে, ২০১২

ক্রিকেটার মামার কাণ্ড

ক্রিকেটার মামার কাণ্ড
(www.kishorkanthabd.com/ মাসিক কিশোরকন্ঠ থেকে সংগৃহীত)





ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ক্রিকেটে বাংলাদেশ গো-হারা হওয়ার পর মামা মুখ ভেঙ্চে বললেন, ‘ছিঃ, এটা একটা খেলা হলো! এ তো আমি বাঁ হাত দিয়েও খেলতে পারি।
তাই না কি! তা দেখাও না খেলে একদিন।আমি কৌতূহলী গলায় কথাটা বলে আড়চোখে তাকালাম মামার দিকে।
মামা গোঁফ মুচড়ে বললেন, ‘বয়সটা কিঞ্চিত বাগড়া দেবে অবশ্যই। তাতে কী আসে যায়। তোর ব্যাটখানা নিয়ে মাঠে চলতো, একটু প্র্যাকটিস করে আসি।
গভীর প্রত্যয়ে মামার চোখ চক চক করে উঠল।
প্র্যাকটিস করবে ভালো কথা, কিন্তু কী করে ব্যাট ধরতে হয় জানো তো?’
দ্যাখ পটলা, বাপের মতো ঠেস দিয়ে কথা বলবিনে। আমি ব্যাট ধরতে পারি আর না পারি দ্যাটস নট ইওর লুক আউট।
মামা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কথাটা বলে খালি বোতল দিয়ে বল পেটানোর একটা ভঙ্গি করলেন।
স্যরি মামা, তুমি পারবে না আমি ঠিক সে কথা বলিনিআমি মুখ কাঁচুমাচু করে চোখ ফেরালাম জানালার বাইরে।
মামা মুখ বেঁকিয়ে বললেন, ‘থাক থাক, আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না। আমি সব বুঝি।
দ্যাখো মামা, তুমি একটা বড় সুযোগ নষ্ট করেছ। বিশ্বকাপ দলে ঢুকে পড়লে না কেন শুনি?’
মামা গম্ভীর গলায় বললেন, ‘হ্যাঁ, সেটা অবশ্য একটা ব্যাপার বটে। তবে আমি উপযাচক হয়ে সেটা বলব কেন? প্রয়োজনে ওরা আমাকে খুঁজে বের করবে। হাওয়েভার, চল তো মাঠে গিয়ে একটু প্র্যাকটিসটা সেরে আসি।
স্কুল মাঠে বিকেলে পাড়ার ছেলেরা ব্যাট-বল নিয়ে সামান্য হাত মশক করে। মামা ব্যাটখানা হাতে নাচাতে নাচাতে ক্রিজে গিয়ে দাঁড়ালেন। নান্টু, অপু, টুলুরা খুব মজা পেয়ে গেল মামাকে দেখে। মামা শচীন টেন্ডুলকারের ভঙ্গিতে একটু পরখ করে দেখলেন ব্যাটখানা। আর ঠুক ঠুক করে সেটা বারকয়েক ছোঁয়ালেন মাটিতে। টুলু গেল বল করতে। মামার কাণ্ড দেখে হাঁ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ফিল্ডের বাইরে। মামা শেষবারের মতো চট করে দেখে নিলেন আমাকে। টুলু দৌড় শুরু করল। মামা প্রস্তুত। দ্রুতগতিতে বল ছুটে আসতেই হেঁকে ব্যাট চালালেন মামা। বল-ব্যাটের সংযোগ না ঘটলেও মামার হাত ফসকে ব্যাটখানা রকেটের গতিতে উড়ে গিয়ে খিজির উকিলের জানালার কাচে সশব্দে আছড়ে পড়ল।
এ ঘটনায় রীতিমতো বোমা ফুটল উকিল বাড়িতে। উকিলের ষণ্ডা ছেলেটা জামার হাতা গুটিয়ে মাঠের দিকে ছুটে আসছে দেখে মামা ভোঁ দৌড় মেরে চলে এলেন আমার কাছে, ‘দেখেছিস কেমন পেটালাম। এখন শিগগির ফোট তো এখান থেকে। ষণ্ডাটা এদিকে তেড়ে আসছে দেখছিস না।
মূলত মামার ক্রিকেট খেলার এখানেই ইতি।
কিন্তু পুনরায় বিপত্তি ঘটল এক রাতে। আমাদের পাড়ায় কড়া লোডশেডিং চলছে। মামা হাঁসফাঁস করছেন বিটকেলে গরমে। আমার পাশে শুয়ে তালপাখার বাতাস খেতে খেতে তিনি সুইজারল্যান্ডের হৃদয়কাড়া আবহাওয়ার ওপর রীতিমত বক্তৃতা ফেঁদে বসলেন।
সুইজারল্যান্ডের ঠাণ্ডা হাওয়ায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই। হঠাৎ পিঠে দড়াম করে কী একটা আছড়ে পড়তেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম বিছানায়। চোখ কচলে দেখি মামা তালপাখাটা ব্যাটের ভঙ্গিতে মুঠো করে ধরে আছেন তখনও।
এরপর জাতীয় দলে মামার স্থান না হওয়ার কোনো কারণ দেখি না।