বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

:: নিশ্চই আমার রব আমাকে ……..দিয়েছেন! ::




:: নিশ্চই আমার রব আমাকে ……..দিয়েছেন! ::


হযরত ইবনে উমর (রা:)-এর শাসনামলে এক যুবক মসজিদে ইবাদত করত। হযরত উমর (রা:) তার ইবাদত দেখে বিস্মিত হতেন। যুবকের পিতার বড় কমজোড় হয়ে গিয়েছিলেন। যুবক ইশার নামাযের পর পিতার খিদমত করতে চলে যেত। তার গমন পথে এক রমণী তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল। তারপর থেকে সেই রমণী সেই যুবককে তার দিকে আহবান করত, বিভিন্নভাবে, হাসি কৌতুক করে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার প্রয়াস চালাত।... একদিন সেই যুবক রমণীর সাথে তার বাড়ীতে গমন করল। যুবক রমণীর বাড়ীতে প্রবেশ করার মুহুর্তে এই আয়াতটি তার মনে পড়ে গেল: ان ا لذين اذا مسهم طا ئف من الشيطا ن تذ كر وا فا ذاهم مبصر ون অর্থ: যারা খোদাভীরু, যখন তাদের মধ্যে শয়তানের পক্ষ হতে সংশয় সৃষ্টিকারী পয়দা হয়, তখন তারা স্মরণ করে স্পষ্টভাবে (প্রকৃত বিষয়টি) দেখতে পায়।

এই সময় তার অন্তরে আল্লাহ্ তায়ালার ভয় এমন প্রবলভাবে উদয় হলো যে, সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। এদিকে তার ঘরে ফিরতে দেরী হওয়ায়, তার পিতা সন্তানের খোঁজে বাইরে বের হয়ে এক স্থানে ছেলেকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলেন। তিনি ছেলেকে সেখান থেকে বাড়ী নিয়ে আসলে, দীর্ঘ সময় পর ছেলের জ্ঞান ফিরল। তিনি তখন ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, সত্য করে বল তোমার কি হয়েছিল? যুবক তখন সেই আয়াতটি পাঠ করল এবং মাটিতে পড়ে গিয়ে প্রাণ ত্যাগ করল।


যুবকের ইন্তেকালের পর লোকেরা তার গোসল কাফন দানের পর দাফন সম্পন্ন করল। পর দিন সকালে এক ব্যক্তি হযরত উমর (রা:)কে এই ঘটনা জানালে তিনি সমবেদনা প্রকাশের জন্য যুবকের পিতার কাছে গিয়ে বললেন, সময় আমাকে কেন সংবাদ দেওয়া হলো না? পিতা বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! তখন রাত ছিল, আপনার কষ্টের কথা বিবেচনা করেই সংবাদ দেইনি। হযরত উমর (রা:) যুবকের কবরের কাছে যেতে চাইলেন। কয়েকজন সাহাবী সহ তিনি কবরের কাছে গিয়ে পাঠ করলেন: و لمن خا ف مقا م ربه جنتا ن অর্থ: যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের নিকট দাঁড়ানোকে ভয় করে, তাঁর জন্য দুটি জান্নাত (সূরা আর্ রাহমান) হযরত উমর (রা:)-এর এই আয়াত পাঠের পর কবর থেকে যুবক বলে উঠল: হে উমর! নিশ্চই আমার রব আমাকে দুইটি জান্নাত দিয়েছেন!


ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি রহ: রচিতনুরুছ্ছুদুরএর উর্দুকবরকে হালাত”-এর বাংলা তরজমাকবর জগতের কথা” – হাফেয মোহাম্মদ খালেদ (দা: বা:), মোহাম্মাদী লাইব্রেরী, চকবাজারথেকে সংকলিত

রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

একজন সাহাবীর তওবা করার কাহিনী


 একজন সাহাবীর তওবা করার কাহিনী


মুমিনদের চরিত্র কেমন হবে??? প্লিজ পড়ুন এই সাহাবীর ঘটনা টি......।।

ভীষণ সুন্দর একটি কাহিনী শুনলাম, শুনে চোখ দিয়ে পানি চলে আসল। সবার সাথে শেয়ার করছি। আশা করি আমরা জীবনে সবকিছু একটু অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করব।

আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন সাহাবা, নাম থা’লাবা (Tha’laba, বাংলায় অনেক সময় সা’লাবা বলা হয়)। মাত্র ষোল বছর বয়স। রাসূল (সা) এর জন্য বার্তাবাহক হিসেবে এখানে সেখানে ছ...ুটোছুটি করে বেড়াতেন তিনি। একদিন উনি মদীনার পথ ধরে চলছেন, এমন সময় একটা বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁর চোখ পড়ল দরজা খুলে থাকা এক ঘরের মধ্যে। ভিতরে গোসলখানায়একজন মহিলা গোসলরত ছিলেন, এবং বাতাসে সেখানের পর্দা উড়ছিল, তাই থা’লাবার চোখ ঐ মহিলার উপর যেয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে উনি দৃষ্টি নামিয়ে নিলেন।
কিন্তু থা’লাবার মন এক গভীর অপরাধবোধে ভরে গেল। প্রচন্ড দুঃখ তাকে আচ্ছাদন করল। তার নিজেকে মুনাফিক্বের মত লাগছিল। তিনি ভাবলেন, ‘কিভাবে আমি রাসূল (সা) এর সাহাবা হয়ে এতোটা অপ্রীতিকর কাজ করতে পারি?! মানুষের গোপনীয়তাকে নষ্ট করতে পারি? যেই আমি কিনা রাসূল (সা) এর বার্তা বাহক হিসেবে কাজ করি, কেমন করে এই ভীষণ আপত্তিজনক আচরণ তার পক্ষে সম্ভব?’ তাঁর মন আল্লাহর ভয়ে কাতর হয়ে গেল। তিনি ভাবলেন, ‘না জানি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমার এমন আচরণের কথা রাসূল সা এর কাছে প্রকাশ করে দেয়!’ ভয়ে, রাসূল (সা) এর মুখোমুখি হওয়ার লজ্জায়, তিনি তৎক্ষণাৎ ঐ স্থান থেকে পালিয়ে গেলেন।
* * *
এভাবে অনেকদিন চলে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সাহাবাদের কে থা’লাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই থাকতেন। কিন্তু সবাই জানাল কেউ-ই থা’লাবা কে দেখেনি। এদিকে রাসূল সা এর দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছিল। তিনি উমর (রা), সালমান আল ফারিসি সহ আরো কিছু সাহাবাদের পাঠালেনথা’লাবার খোঁজ আনার জন্য। মদীনা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও থা’লাবার দেখা মিলল না। পরে মদীনার একেবারে সীমানাবর্তী একটা স্থানে, মক্কা ও মদীনার মধ্যখানে অবস্থিত পর্বতময় একটা জায়গায় পৌঁছে কিছু বেদুঈনের সাথে দেখা হল তাদের। দেখানে এসে তারা থা’লাবার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শুরু করলেন। ‘তোমরা কি লম্বা, তরুণ, কম বয়সী একটা ছেলেকে এদিকে আসতে দেখেছ?’

বেদুঈনগুলো মেষ চড়াচ্ছিল। তারা জবাব দিল, সে খবর তারা জানেনা, তবে তারা জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কি ক্রন্দনরত বালকের সন্ধানে এসেছ?’ একথা শুনে সাহাবীরা আগ্রহী হয়ে উঠলেন এবং তার বর্ণনা জানতে চাইলেন। উত্তরে ওরা বলল, ‘আমরা প্রতিদিন দেখি মাগরিবের সময় এখানে একটা ছেলে আসে, সে দেখতে এতো লম্বা, কিন্তু খুব দুর্বল, সে শুধুই কাঁদতে থাকে। আমরা তাকে খাওয়ার জন্য এক বাটি দুধ দেই, সে দুধের বাটিতে চুমুকদেয়ার সময় তার চোখের পানি টপটপকরে পড়ে মিশে যায় দুধের সাথে, কিন্তু সেদিকে তার হুঁশ থাকেনা!’ তারা জানালো চল্লিশ দিন যাবৎ ছেলেটা এখানে আছে। একটা পর্বতের গুহার মধ্যে সে থাকে, দিনে একবারই সে নেমে আসে, কাঁদতে কাঁদতে; আবার কাঁদতে কাঁদতে, আল্লাহর কাছে সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে উপরে চলে যায়।
সাহাবারা বর্ণনা শুনেই বুঝলেন, এ থা’লাবা না হয়ে আর যায় না।
তবে তাঁরা উপরে যেয়ে থা’লাবা ভড়কে দিতে চাচ্ছিলেন না, এজন্য নিচেই অপেক্ষা করতে লাগলেন।

যথাসময়ে প্রতিদিনের মত আজও থা’লাবা ক্রন্দনরত অবস্থায় নেমে আসলেন, তাঁর আর কোনদিকে খেয়াল নাই। কী দুর্বল শরীর হয়ে গেছে তাঁর! বেদুঈনদের কথামত তাঁরা দেখতে পেলেন, থা’লাবা দুধের বাটিতে হাতে কাঁদছে, আর তাঁর অশ্রু মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তাঁর চেহারায় গভীর বিষাদের চিহ্ন স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।

সাহাবারা তাকে বললেন, ‘আমাদের সাথে ফিরে চল’; অথচ থা’লাবা যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। তিনি বারবার সাহাবাদেরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, ‘আল্লাহ কি আমার মুনাফেক্বী বিষয়ক কোন সূরা নাযিল করেছে?’
সাহাবারা উত্তরে বললেন, ‘না আমাদের জানামতে এমন কোন আয়াত নাযিল হয় নাই।’

উমর (রা) বললেন, রাসূল (সা) আমাদেরকে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। তুমি যদি এখন যেতে রাজি না হও, তাহলে তোমাকে আমরা জোর করে ধরে নিয়ে যাব। রাসূল (সা) এর কথা অমান্য করবেন এমন কোন সাহাবা ছিল নাহ। কিন্তু থা’লাবা এতোটাই লজ্জিত ছিলেন যে ফিরে যেতে চাচ্ছিলেন নাহ। এরপর সাহাবারা তাকে রাসূল (সা) এর কাছে মদীনায় নিয়ে আসেন।

মহানবী (সা) এর কাছে এসে থা’লাবা আবারও একই প্রশ্ন করে, ‘আল্লাহ কি আমাকে মুনাফিক্বদের মধ্যে অন্তর্গত করেছেন অথবা এমন কোন আয়াত নাযিল করেছেন যেখানে বলা আমি মুনাফিক্ব?’ রাসূল (সা) তাকে নিশ্চিত করলেন যে এমন কিছুই নাযিল হয়নি। তিনি থা’লাবার দুর্বল পরিশ্রান্ত মাথাটা নিজের কোলের উপর রাখলেন। থা’লাবা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, এমন গুনাহগারব্যক্তি র মাথা আপনার কোল থেকে সরিয়ে দিন।’ উনার কাছে মনে হচ্ছিল যেন সে এসব স্নেহের যোগ্য নাহ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সান্ত্বনা দিতেই থাকলেন। আল্লাহর রহমত আর দয়ার উপর ভরসা করতে বললেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন। এমন সময় থা’লাবা বললেন,
‘হে আল্লাহর রাসূল আমার এমন মনে হচ্ছে যেন আমার হাড় আর মাংসের মাঝখানে পিঁপড়া হেঁটে বেড়াচ্ছে।’
রাসূল (সা) বললেন, ‘ওটা হল মৃত্যুর ফেরেশতা। তোমার সময় এসেছে থা’লাবা, শাহাদাহ পড়’।

থা’লাবা শাহাদাহ বলতে থাকলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’
উনি শাহাদাহ বলতে থাকলেন... বলতেই থাকলেন... এমনভাবে তাঁর রুহ শরীর থেকে বের হয়ে গেল।
* * *

মহানবী (সা) থা’লাবাকে গোসল করিয়ে জানাজার পর কবর দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন।আরো অনেক সাহাবা থা’লাবাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মহানবী (সা) পা টিপে টিপে অনেক সাবধানে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। উমর রাদিয়ালাহু আনহু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনিএভাবে কেন হাঁটছেন যেন ভিড়ের মাঝে হেঁটে চলেছেন.. কতো রাস্তা ফাঁকা পরে আছে, আপনি আরাম করে কেন চলছেননা ইয়া রাসুল?’
উত্তরে রাসূল (সা) বললেন, ‘হে উমর, আমাকেঅনেক সাবধানে চলতে হচ্ছে। সমস্ত রাস্তা ফেরেশতাদের দ্বারা ভরে গেছে । থা’লাবার জন্য এতো ফেরেশতা এসেছে যে আমি ঠিকমত হাঁটার জায়গা পাচ্ছি না’।
সুবহান আল্লাহ !

এই সেই থা’লাবা যে ভুলক্রমে একটা ভুল করার জন্য এতো প্রায়শ্চিত্য করেছেন। গুনাহ-র কাজ করা তো দূরের কথা, গুনাহ নাকরেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে চেয়ে ব্যাকুল হয়েছেন। কত উঁচু ছিলেনতিনি আল্লাহর চোখে যে তাকে নেয়ার জন্য ফেরেশতাদের আগমনে রাস্তা ভরে গিয়েছিল! এই সব ফেরেশতারা নেমে এসেছে শুধু থা’লাবার জন্য, তাঁর জন্য দুআ করারজন্য, তাকে নিয়ে যাবার জন্য। আর আমরা সারাদিন জেনে না জেনে এতো ভুল করেও, এতোগুনাহ করেও অনুশোচনা করি না! উলটা আমাদের পছন্দ মত কিছু না হলেই আল্লাহর আদেশের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকি, জীবন নিয়ে নালিশ করতে থাকি।

একটা হাদীস আছে, ‘মু’মিন বান্দার কাছে তার গুনাহগুলো এমন যেন এখনই পাহাড় ভেঙ্গে তার মাথার উপর পড়বে; আর একজন দুর্বৃত্তকারীর কাছে গুনাহ এরকম যে মাছি এসে তার নাকের উপর উড়াউড়ি করছে, আর সে হাত নাড়িয়ে সেটা সরিয়ে দিল’।
[বুখারি, বইঃ৭৫, হাদীস নং ৩২০]

আমরা আমাদের গুনাহগুলোকে দেখেও না দেখার ভান করি। স্বীকার করতে চাইনা। কতো রকম যুক্তি দিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করি। একটু ফ্যাশন, শখ, মনের ইচ্ছা পূরণ, মানুষের সামনে বড় হওয়া, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমরা গুনাহ-র কাজে জড়িয়ে পরি। কিন্তু আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাবতে পারিনা। আমাদের যুক্তি, অহংকার, শয়তানের মতই আমাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা থেকে বিরত রাখে। কিয়ামতের দিন এক আল্লাহর রহমত আর দয়া ছাড়া কিছুই আমাদেরকে আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে না। জান্নাত তাদেরজন্যই যারা আল্লাহর কাছে মাথা নতকরে। আত্মসমর্পণ করে পূর্ণভাবে। নিজের ইচ্ছা, অহম বোধের কাছে মাথা নত করেনা। তাই ঈমানদার ব্যক্তিই বিনয়ী। তার রবের সামনে কাঁদতে সে লজ্জা পায় না। ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে কুন্ঠাবোধকরেনা। সততার সাথে ক্ষমা চেয়ে দৃড়ভাবে সেই কাজ থেকে বিরত থাকে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, ‘যেতওবা করে এবং ঈমান আনে ও পুণ্য-পবিত্র ক্রিয়াকর্ম করে। সুতরাং তারাই, -- আল্লাহ্ তাদের মন্দকাজকে সৎকাজ দিয়ে বদলে দেবেন। আর আল্লাহ্ সতত পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা’।
[সূরাহ ফুরক্বানঃ ৭০]

আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের জেনে না জেনে করা গুনাহগুলো থেকে ক্ষমা করে দিক ! আমাদেরকে সঠিকভাবে মনের অন্তঃস্থল থেকে অনুতাপ করার, ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দান করুক। আমাদেরকে নিজেদের ভুলবুঝার আর স্বীকার করে নিয়ে খারাপ কাজগুলো থেকে দূরে থাকার তওফিক দিক... আমীন।

সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

একজন শ্বেতকুষ্ঠ রোগী, একজন টেকো ব্যক্তি এবং অপরজন অন্ধ ব্যক্তির ঘটনা




একজন শ্বেতকুষ্ঠ রোগী, একজন টেকো ব্যক্তি এবং অপরজন অন্ধ ব্যক্তির ঘটনাঃ


আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন। বনী ইসরাইলের মধ্যে তিন জন রুগ্ন ব্যক্তি ছিল, একজন শ্বেতকুষ্ঠ রোগী, একজন টেকো ব্যক্তি এবং অপরজন অন্ধ আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলেন, তাই তাদের নিকট একজন ফেরেশতা পাঠালেন।

ফেরেশতা প্রথমে শ্বেতকুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে বললেন: তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তু কী ? সে বলল উত্তম রং উত্তম চামড়া, লোকজন আমাকে ঘৃণা করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অত:পর ফেরেশতা তার শরীরে হাত বুলিয়ে নিলেন। ফলে তার ঘৃণার বস্তু দূর হয়ে গেল এবং তাকে উত্তম রং উত্তম চামড়া দান করা হলো

তারপর ফেরেশতা তাকে বলল: কোন সম্পদ তোমার নিকট অধিক প্রিয় সে বলল: উট অথবা গরু (বর্ণনাকারীর সন্দেহ ) বর্ণনাকারী ইসহাক সন্দেহ করে বলেন যে, কুষ্ঠরোগী, অথবা মাথায় টাকপড়া ব্যক্তি দুজনের একজন উট অপরজন গরু চেয়েছিলেন। অত:পর তাকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী মাদী উট দেয়া হল এবং ফেরেশতা দুআ করে বললেন: এতে তোমার বরকত হোক।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অত:পর ফেরেশতা টেকো ব্যক্তির নিকট এসে বললেন: তোমার নিকট প্রিয়বস্তু কী ? সে বললো, উত্তম চুল ; যার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে, তা আমার থেকে চলে যাওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ফেরেশতা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তার টাক দূর হয়ে গেল, তিনি বললেন: এবং তাকে উত্তম চুল দান করা হলো। ফেরেশতা বললেন: তোমার নিকট কোন সম্পদ অধিক প্রিয় ? সে বলল: গরু। অত:পর তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দান করা হলো। ফেরেশতা বললেন : তোমার এতে বরকত হোক।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: অত:পর ফেরেশতা অন্ধ লোকটির কাছে এসে বললেন: তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তু কী? সে বললো, আল্লাহ যেন আমার চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন, যাদ্বারা আমি লোকজন দেখতে পাই। নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ফেরেশতা তার চোখের উপর হাত ফিরালেন, ফলে আল্লাহ তাআলা তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট কোন সম্পদ অধিক প্রিয়? লোকটি বলল, ছাগল। সুতরাং তাকে প্রসব সম্ভবা ছাগল প্রদান করা হল।

অত:পর প্রথমোক্ত দুজনের উট, গরু বাচ্চা জন্ম দিতে থাকলো এবং শেষোক্ত জনের ছাগল ছানা প্রসব করতে থাকলো। এমনকি প্রত্যেকের এক উপত্যকা ভরা উট, এক উপত্যকা ভরা গরু এবং এক উপত্যকা ভরা ছাগল হয়ে গেল।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তারপর সেই ফেরেশতা (লোকদেরকে পরীক্ষা করার জন্য) পূর্ব অবয়বে প্রথমোক্ত শ্বেতকুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে বললেন: আমি একজন মিসকিন ব্যক্তি, মুসাফির, সফরে আমার সব সামর্থ্য শেষ হয়ে গেছে। এখন আল্লাহর দয়া ছাড়া নিজ ঘরে পৌঁছার কোনো উপায় নেই, অত:পর আপনার সাহায্য। আমি আল্লাহর নামে আপনার নিকট একটি উট কামনা করছি, যিনি আপনাকে এহেন সুন্দর রং সুন্দর চামড়া এবং অধিক পরিমাণ উট দান করেছেন, যাতে আমি আমার বাড়ি পৌছেতে পারি।

লোকটি বলল: আপনার দাবী অনেক বড়। ফেরেশতা বললেন: মনে হয় যেন আমি আপনাকে চিনি। আপনি কি দরিদ্র, কুষ্ঠ রোগী ছিলেননা ? যাতে লোকজন আপনাকে ঘৃণা করতো। এবং দরিদ্র ছিলেন অত:পর আল্লাহ আপনাকে সম্পদশালী করেছেন। তখন লোকটি বলল: এসব ধন-সম্পদ আমি বংশানুক্রমে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছি।

ফেরেশতা বলল: তুমি যদি মিথ্যাবাদী হও, তবে আল্লাহ তোমাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিন।

তারপর ফেরেশতা আপন ছুরতে টেকো ব্যক্তির কাছে এসে তাই বলল যা প্রথম ব্যক্তিকে বলল। উত্তরে টেকো ব্যক্তিও তাই বলল, যা প্রথম ব্যক্তি বলেছিল। অত:পর ফেরেশতা বলল: যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও তবে আল্লাহ তোমাকে আগের মত বানিয়ে দিন।

ফেরেশতা পূর্ব অবয়বে পূর্ব বেশে অন্ধ ব্যক্তির নিকট এসে বললেন, আমি একজন দারিদ্র মুসাফির। সফরে আমার সব অর্থ শেষ হয়ে গেছে, বাড়ি পৌঁছার আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপায় নেই, অত:পর আপনার সাহায্য। যে আল্লাহ আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন, তার নামে আমি আপনার কাছে একটা ছাগল ভিক্ষা চাইছি, যা দ্বারা আমি আমার বাড়ি পৌছতে পারি।

তখন সে বলল: আমি অন্ধ ছিলাম অত:পর আল্লাহ দয়া করে আমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। আপনি যা ইচ্ছা নিয়ে যান আল্লাহর জন্য আপনি যা নিবেন তাতে আমি কোনো বাধাদিব না।

তখন ফেরেশতা বলল: আপনার সম্পদ আপনার কাছেই থাক। মূলত আল্লাহ আপনাদের পরীক্ষা নিয়েছেন। আল্লাহ আপনার উপর রাজি হয়েছেন আর আপনার দুই সাথীর উপর অসন্তষ্ট হয়েছেন।
(সহীহ বুখারী)