রবিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

‘আপনি এই সামান্য কয়েক তাল মাটি তুলতে পারলেন না’



‘আপনি এই সামান্য কয়েক তাল মাটি তুলতে পারলেন না’

স্পেনে তখন হাকামের রাজত্ব।একদিন রাজধানীর নিকটবর্তী একটি স্থান তাকে আকৃষ্ট করল।সেখানে তার জন্য একটি রাজপ্রাসাদ নির্মানের পরিকল্পনা তিনি ঠিক করে ফেললেন।

স্থানটি ছিল এক বৃদ্ধার।বৃদ্ধা সেই স্থানের উপর একটি কুটিরে বাস করতেন।হাকাম স্থানটি উচিত মূল্যে খরিদ করার প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু বৃদ্ধা রাজী হলেন না।হাকাম দিগুন মূল্য দিতে চাইলেন,তবুও বৃদ্ধা  রাজী হলেন না।ক্রুদ্ধ হয়ে হাকাম জোর করে স্থানটি বৃদ্ধার নিকট থেকে কেড়ে নিলেন।অল্প কালের মধ্যেই স স্থানে বিরাট সুন্দর প্রাসাদ নির্মিত হল,সম্মুখে তার একটি সুন্দর উদ্যান। বৃদ্ধা কিন্তু নিরুতসাহিত হলেন না। তিনি সোজা কাজীর বা বিচারকের কাছে হাকামের মধ্যে নালিশ করলেন।
কিছুকাল পরে হাকাম কাজী বা বিচারক সাহেব কে দাওয়াত করলেন তার নতুন প্রাসাদ ও বাগান দেখতে।নির্দিষ্ট সময়ে কাজী একটি গাধা ও কয়েকটি শূন্য থলে নিয়ে উপস্থিত হলেন।

 বাদশাহ একটু বিস্মিত হলেন।সাথে সাথে একটু কৌতুকও বোধ করলেন।কাজী বাদশাহর কাছে বিনীত নিবেদন জানিয়ে বললেন,জাহাপনা,

আমাকে এই বাগান থেকে কয়েক বস্তা মাটি দিতে হুকুম করুন।। এই অদ্ভুত অনুরোধে বাদশাহ ততক্ষনাত রাজী হলেন।কিন্তু মাটি দিয়ে কাজী কি করবেন,তিনি তা আর ভেবে পান না। কাজী বস্তাগুলো মাটি দিয়ে ভর্তি করলেন,তারপর বাদশাহ কে আরো বিস্মিত করে তিনি বস্তাগুলো গাধার পিঠে তুলে দিতে তাকে সাহায্য করতে অনুরোধ করলেন। বাদশাহর কৌতুহল চরমে উঠল।তিনি তাতেও রাজী হয়ে সানন্দে বস্তাগুলো তুলে দিতে অগ্রসর হলেন।কিন্তু বস্তাগুলো এত ভারী ছিল যে,বাদশাহ শত চেষ্টা করে একটিও নাড়াতে পারলেন না।

কাজী বাদশাহর দিকে ফিরে চেয়ে বললেন,‘আপনি এই সামান্য কয়েক তাল মাটি তুলতে পারলেন না’।কিন্তু মহাবিচারের দিন আপনি কি করে গোটা বাগানটাই কাধে করে আল্লাহর আদেশে বৃদ্ধাকে ফেরত দিবেন?কারন,স্থানটি আপনি বৃদ্ধার নিকট থেকে অন্যায়ভাবে দখল করেছেন।
বাদশাহ লজ্জিত হলেন। তিনি ততক্ষনাত বৃদ্ধাকে ডেকে পাঠালেন।বৃদ্ধার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি বাগান ও প্রাসাদ সমেত স্থানটি বৃদ্ধাকে দিয়ে দিলেন।
শাসনের কর্তৃত্বভার,বড় গুরু দায়িত্ব সে।তার ত্রুট-বিচ্যুতির জন্য জবাবদিহী করতে হবে মহা বিচারের দিন।আল্লাহর কাছে তার হিসেব-নিকেশ দিতে হবে।

তাই খলীফাদের,মুসলিম বাদশাহর চিন্তার শেষ নাই,ব্যাকুলতার সীমা নাই।

আবার কেউ হয়তো আত্মবিস্মৃত হয়ে ক্ষনিকের জন্য কর্তব্যের কথা ভুলে যান,তখন রূঢ় আঘাত দিয়ে ,কৌশল ও ততপরতা দিয়ে তার সম্বিত ফিরিয়ে আনতে হয়।

খলীফা মানুষ তো।ভুল তাই হতেই পারে,কিন্তু ভুলের জন্য ভুগতে হয় জনগনকে,দুর্বলকে।তাই দেশের উজীর,কাজী,খলীফার প্রতিটি কাজে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন,নির্মম ভাবে আঘাত দিতে,অপ্রিয় ও রূঢ় সত্যকথা বলতে একটু ও ইতস্তত বোধ করেন না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন