মঙ্গলবার, ১ মে, ২০১২

ক্রিকেটার মামার কাণ্ড

ক্রিকেটার মামার কাণ্ড
(www.kishorkanthabd.com/ মাসিক কিশোরকন্ঠ থেকে সংগৃহীত)





ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ক্রিকেটে বাংলাদেশ গো-হারা হওয়ার পর মামা মুখ ভেঙ্চে বললেন, ‘ছিঃ, এটা একটা খেলা হলো! এ তো আমি বাঁ হাত দিয়েও খেলতে পারি।
তাই না কি! তা দেখাও না খেলে একদিন।আমি কৌতূহলী গলায় কথাটা বলে আড়চোখে তাকালাম মামার দিকে।
মামা গোঁফ মুচড়ে বললেন, ‘বয়সটা কিঞ্চিত বাগড়া দেবে অবশ্যই। তাতে কী আসে যায়। তোর ব্যাটখানা নিয়ে মাঠে চলতো, একটু প্র্যাকটিস করে আসি।
গভীর প্রত্যয়ে মামার চোখ চক চক করে উঠল।
প্র্যাকটিস করবে ভালো কথা, কিন্তু কী করে ব্যাট ধরতে হয় জানো তো?’
দ্যাখ পটলা, বাপের মতো ঠেস দিয়ে কথা বলবিনে। আমি ব্যাট ধরতে পারি আর না পারি দ্যাটস নট ইওর লুক আউট।
মামা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কথাটা বলে খালি বোতল দিয়ে বল পেটানোর একটা ভঙ্গি করলেন।
স্যরি মামা, তুমি পারবে না আমি ঠিক সে কথা বলিনিআমি মুখ কাঁচুমাচু করে চোখ ফেরালাম জানালার বাইরে।
মামা মুখ বেঁকিয়ে বললেন, ‘থাক থাক, আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না। আমি সব বুঝি।
দ্যাখো মামা, তুমি একটা বড় সুযোগ নষ্ট করেছ। বিশ্বকাপ দলে ঢুকে পড়লে না কেন শুনি?’
মামা গম্ভীর গলায় বললেন, ‘হ্যাঁ, সেটা অবশ্য একটা ব্যাপার বটে। তবে আমি উপযাচক হয়ে সেটা বলব কেন? প্রয়োজনে ওরা আমাকে খুঁজে বের করবে। হাওয়েভার, চল তো মাঠে গিয়ে একটু প্র্যাকটিসটা সেরে আসি।
স্কুল মাঠে বিকেলে পাড়ার ছেলেরা ব্যাট-বল নিয়ে সামান্য হাত মশক করে। মামা ব্যাটখানা হাতে নাচাতে নাচাতে ক্রিজে গিয়ে দাঁড়ালেন। নান্টু, অপু, টুলুরা খুব মজা পেয়ে গেল মামাকে দেখে। মামা শচীন টেন্ডুলকারের ভঙ্গিতে একটু পরখ করে দেখলেন ব্যাটখানা। আর ঠুক ঠুক করে সেটা বারকয়েক ছোঁয়ালেন মাটিতে। টুলু গেল বল করতে। মামার কাণ্ড দেখে হাঁ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ফিল্ডের বাইরে। মামা শেষবারের মতো চট করে দেখে নিলেন আমাকে। টুলু দৌড় শুরু করল। মামা প্রস্তুত। দ্রুতগতিতে বল ছুটে আসতেই হেঁকে ব্যাট চালালেন মামা। বল-ব্যাটের সংযোগ না ঘটলেও মামার হাত ফসকে ব্যাটখানা রকেটের গতিতে উড়ে গিয়ে খিজির উকিলের জানালার কাচে সশব্দে আছড়ে পড়ল।
এ ঘটনায় রীতিমতো বোমা ফুটল উকিল বাড়িতে। উকিলের ষণ্ডা ছেলেটা জামার হাতা গুটিয়ে মাঠের দিকে ছুটে আসছে দেখে মামা ভোঁ দৌড় মেরে চলে এলেন আমার কাছে, ‘দেখেছিস কেমন পেটালাম। এখন শিগগির ফোট তো এখান থেকে। ষণ্ডাটা এদিকে তেড়ে আসছে দেখছিস না।
মূলত মামার ক্রিকেট খেলার এখানেই ইতি।
কিন্তু পুনরায় বিপত্তি ঘটল এক রাতে। আমাদের পাড়ায় কড়া লোডশেডিং চলছে। মামা হাঁসফাঁস করছেন বিটকেলে গরমে। আমার পাশে শুয়ে তালপাখার বাতাস খেতে খেতে তিনি সুইজারল্যান্ডের হৃদয়কাড়া আবহাওয়ার ওপর রীতিমত বক্তৃতা ফেঁদে বসলেন।
সুইজারল্যান্ডের ঠাণ্ডা হাওয়ায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই। হঠাৎ পিঠে দড়াম করে কী একটা আছড়ে পড়তেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম বিছানায়। চোখ কচলে দেখি মামা তালপাখাটা ব্যাটের ভঙ্গিতে মুঠো করে ধরে আছেন তখনও।
এরপর জাতীয় দলে মামার স্থান না হওয়ার কোনো কারণ দেখি না।

1 টি মন্তব্য: