ইমাম আবু হানিফা ও নাস্তিকদের তর্কযুদ্ধ
ইমাম আবু হানিফা তার নিয়মিত কাজের অংশ
হিসেবে একবার এক নাস্তিক রাজ্যের সবাইকে এক আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিলেন। কিন্তু
তারা তো আল্লাহ আছেন সেটাই বিশ্বাস করে না,কিভাবে এক আল্লাহর ইবাদাত করবে।
ইমাম আবু হানিফা তাদের কে এক আল্লাহর অস্তত্ব সম্পর্কে অনেক
বুঝালেন,কিন্তু তারা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইল না। ইমাম সাহেবও নাছোড় বান্দা।
তিনিও তার চেষ্টা ছাড়লেন না। অবশেষে তারা বলল,ঠিক আছে চল,তর্কযুদ্ধের আয়োজন করি।
যে পক্ষ জিতবে,অন্য পক্ষ বিজয়ী পক্ষের বিশ্বাস মেনে নিবে। যেই কথা সেই কাজ। এর
কয়েকদিন পরেই তর্কযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে নাস্তিকদের রাজ্যে।
উভয় পক্ষ তাদের যুক্তি গুলো সংগ্রহ করে
সাজাতে লাগল। অবশেষে সে দিনটি চলে আসল। নাস্তিকদের রাজ্যে তাদের রাজা সহ সব
পন্ডিতবর্গ হাজির হল। তর্কযুদ্ধ শুরুর যথাসময়ও উপস্থিত হয়ে গেল। কিন্তু অপর পক্ষের
ইমাম আবু হানিফা তখনো হাজির হন নি। একটু একটু করে সময় গড়াতে লাগল,কিন্তু ইমামের
আসার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছিল না। তখন নাস্তিকরা সবাই খুব আনন্দ ও হৈ চৈ করতে লাগল
এবং মনে করল যে,ইমাম আবু হানিফার কাছে মনে হয় কোন কঠিন ও মজবুত যুক্তি নেই,তাই
সম্ভবত তিনি আসেন নি। এই কথা গুলো তারা আলোচনা করতে লাগল।
এরই মধ্যে দেখা গেল শুধু ইমাম আবু হানিফা
তাড়াহুড়ো করে একাই উপস্থিত হলেন। তখন নাস্তিকরা বলল,আপনি কেন দেরি করলেন,আমরা জিতে
গেছি। ইমাম সাহেব বললেন,একটু শান্ত হও,কে জিতবে সেটা পরে আসছি,তার আগে শোন, কেন
আমার দেরি হল ?
সবাই বলল,আচ্ছা ঠিক আছে,চুপ করলাম।এবার
শুনান কেন আপনার দেরি হল?
ইমাম সাহেব বললেন,তাহলে শোন,আমি যথাসময় আমার
বাসা থেকে বের হলাম তোমাদের এখানে আসার জন্য।ঠিকঠাক মত সব পথ পার হলাম। বিপত্তি
বাধল যখন নদীর তীরে এসে পৌছলাম তখন।নদী পার হওয়ার মত কোন নৌকা পেলাম না। কি করব
বুঝতে পারছিলাম না।হঠাৎ করে দেখলাম, আমার থেকে দূরে ইয়া বড় একটা গাছ আপনা-আপনি
কেটে ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল,কিন্তু কোন মানুষ দেখলাম না। তারপর আপনা-আপনি গাছের ছালটি আলাদা হয়ে গেল।
তারপর আপনা-আপনি গাছটি চিরে টুকরো টুকরো হয়ে বিভিন্ন তক্তায় রুপান্তরিত হল। তারপর
ইয়া বড় একটা নৌকায় পরিনত হল এবং আমার সামনে আসল।এরপর আমি ঐ নৌকায় উঠে এখানে আসলাম।এটাই
হল আমার দেরি হওয়ার কারণ। এ কথা বলে ইমাম সাহেব থামলেন।
এ কথা শুনে নাস্তিকরা সবাই হো হো করে হাসতে
লাগল এবং বলতে লাগল,এটা কি করে সম্ভব হতে পারে যে একটা আস্ত জিবীত গাছ কোন মানুষের
স্পর্শ ছাড়াই ইয়া বড় একটা নৌকায় পরিনত হল । তার আবার হাসতে লাগল এবং বলল,
হে ইমাম সাহেব!আমাদের কাছে হেরে যাওয়ার ভয়ে
আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি!আপনি এসব আবোল-তাবোল কি বকছেন?? আপনার কথা কি
করে সম্ভব হতে পারে? আপনিই বলুন।
তখন ইমাম আবু হানিফা তাদের সবাইকে একটু চুপ
করতে বললেন এবং সবার উদ্দেশ্য দাঁড়িয়ে বললেন,আমি অজ্ঞান বা পাগল হয়ে যাইনি,
সম্পুর্ন সজ্ঞানে আমার আসার ঘটনাটা বলেছি। আপনারা কথা বিশ্বাস করেছেন? নাস্তিকরা
সমস্বরে উত্তর দিল-না আমরা বিশ্বাস করিনি। তখন ইমাম সাহেব বললেন,কেন? উত্তরে তার বলল,মানুষের এবং যন্ত্রের স্পর্শ ছাড়া একটা
নৌকা আপনা-আপনি তৈরী হতে পারে না।
তখন ইমাম সাহেব বললেন, তাহলে আপনারাই বলুন,মানুষের এবং যন্ত্রের স্পর্শ ছাড়া একটা নৌকা যদি
আপনা-আপনি তৈরী হতে না পারে, তাহলে এত সম্পদে পরিপুর্ন এই মহাবিশ্ব কিভাবে কোন
স্রষ্টা ছাড়া আপনা-আপনি তৈরী হতে পারে ? এবার আমার এই প্রশ্নের উত্তর দেন সবাই।
তখন নাস্তিকরা সবাই
হতবাক হয়ে গেল এবং চিন্তা করতে লাগল তাই তো! ইমাম সাহেবের কথাই তো ঠিক। তারা কোন উত্তর দিতে পারল না। ইমাম সাহেবের কথার
দ্বারা তাদের ভুল ভেঙ্গে গেল।
তার সবাই আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করল এবং
তার দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল । সবাই ইমাম আবু হানিফাকে অনেক সম্মান ও ধন্যবাদ দিল
এই জন্য যে,তিনি তাদের কে আল্লাহ কে চিনতে সাহায্য করেছেন। তারপর সবাই এক আল্লাহর
ইবাদাত করতে লাগল। ইমাম সাহেব তাদের কে সব কিছু শিক্ষা দিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে
আসলেন।
আসুন আমরাও ভুল না করে এক আল্লাহর এবাদাত
করি,তার সাথে কাউকে শ্রীক না করি।লেখাটা নিজে পড়ুন এবং অন্যের সাথে শেয়ার করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন