শুক্রবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৩

‘দু’জন মহিলার দু’টি বাচ্চা ও সুলায়মান (আঃ)



দুজন মহিলার দুটি বাচ্চা সুলায়মান (আঃ)
বাল্যকালে সুলায়মান (আঃ) :

আল্লাহ পাক সুলায়মানকে তার বাল্যকালেই গভীর প্রজ্ঞা দূরদৃষ্টি দান করেছিলেন। যেমন একটি ঘটনা হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, যা নিম্নরূপ:

দুজন মহিলার দুটি বাচ্চা ছিল। একদিন নেকড়ে বাঘ এসে একটি বাচ্চাকে নিয়ে যায়। তখন প্রত্যেকে বলল যে, তোমার বাচ্চা নিয়ে গেছে। যেটি আছে ওটি আমার বাচ্চা। বিষয়টি ফায়ছালার জন্য দুই মহিলা খলীফা দাঊদ (আঃ) এর কাছে এলো। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলার পক্ষে রায় দিলেন...
তখন তারা বেরিয়ে সুলায়মানের কাছে এলো এবং সবকথা খুলে বলল।

সুলায়মান আঃ তখন একটি ছুরি আনতে বললেন এবং বাচ্চাটাকে দুটুকরা করে দুমহিলাকে দিতে চাইলেন। তখন বয়োকনিষ্ঠ মহিলাটি বলল, ইয়ারহামুকাল্লাহুআল্লাহ আপনাকে অনুগ্রহ করুনবাচ্চাটি মহিলার। তখন সুলায়মান কনিষ্ঠ মহিলার পক্ষে রায় দিলেন [

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৭১৯ক্বিয়ামতের অবস্থাঅধ্যায়সৃষ্টির সূচনা নবীগণের আলোচনাঅনুচ্ছেদ- ]

জুরাইজ, তার মা এবং নামাজ



জুরাইজ, তার মা এবং নামাজ


বানী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয নামের একজন পরহেজগার লোক ছিল সে ইবাদতের জন্য একটি গীর্জা তৈরী করে তথায় সর্বদা ইবাদতে লিপ্ত ছিল সে এক দিন নামাযরত অবস্থায় ছিল এমন সময় তার মা এসে ডাক দিল জুরাইজ বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামায অর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সে নামাযের মধ্যে রয়ে গেল মায়ের ডাকে সাড়া দিলনা মা ব্যর্থ হয়ে চলে গেল
পরের...দিন তার মা আবার আগমণ করল। সেদিনও জুরাইয নামাযে ছিল। তার মায়ের কন্ঠ শুনে সে বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামায। অর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সে নামাযের মধ্যে রয়ে গেল। মায়ের ডাকে সাড়া দিলনা। মা ব্যর্থ হয়ে আজও চলে গেল।

তৃতীয় দিনেও তার মা এসে তাকে নামায রত পেল। জুরাইজ তার মার ডাকে সাড়া না দিয়েই নামাযেই রয়ে গেল। এবার তার মা রাগাম্বিত হয়ে জুরাইযের উপর এই বলে বদ্দু করল যে, হে আল্লাহ! জুরাইয যেন বেশ্যা মহিলার মুখ দেখার পূর্বে মৃত্যু বরণ না করে। বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয এবং তার ইবাদতের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। তাদের মধ্যকার কিছু লোক তাকে পথভ্রষ্ঠ করার জন্য চক্রান- শুরু করল। একজন বেশ্যা মহিলা সেসময় সেজেগোজে ঘুরে বেড়াত। সে প্রসতা করল যে, তোমরা যদি চাও আমি তাকে গোমরাহ করতে পারি।

নবী (সাঃ) বলেন, অতঃপর সেই মহিলা জুরাইযের কাছে গিয়ে নিজেকে পেশ করল। কিন' জুরাইয সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করলনা। জুরাইযের গীর্জায় একজন ছাগলের রাখাল আসা-যাওয়া করত। মহিলাটি জুরাইযের কাছে কোন সুযোগ না পেয়ে রাখালের কাছে গিয়ে তার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হল। এতে সে গর্ভবতী হয়ে গেল। প্রসব করার পর সে বলল এটি জুরাইযের সন্তান। লোকেরা দলে দলে আগমণ করে জুরাইযকে গীর্জা থেকে টেনে বের করল এবং তার গীর্জাটিও ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। লোকেরা মারতে শুরু করল।

জুরাইয জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের কি হল? আমাকে মারছ কেন? আমার ইবাদতখানাটিই বা কেন ভেঙ্গে ফেললে? লোকেরা বললঃ তুমি এই মহিলার সাথে ব্যভিচার করেছ। যার কারণে মহিলাটি সন্তান প্রসব করেছে। জুরাইয জিজ্ঞাসা করলঃ শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটিকে নিয়ে অসল। জুরাইয বলল আমাকে নামায পড়ার জন্য একটু সময় দাও। তারা তাকে নামায পড়ার সুযোগ দিল। নামায শেষ করে শিশুটির কাছে গিয়ে তার পেটে খুচা দিয়ে বললঃ এই ছেলে? তোমার বাপ কে? ছেলেটি বলে দিল, ছাগলের রাখাল।

নবী (সাঃ) বলেন, একথা শুনে লোকেরা আসল তথ্য অনুধাবন করতে পেরে জুরাইযকে চুম্বন করতে শুরু করল এবং তাকে জড়িয়ে ধরল। তারা নিজেদের ভুলের কারণে জুরাইযের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং বলল আপনি অনুমতি দিলে আমরা আপনার গীর্জাটি স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করে দিব। জুরাইয বললঃ স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করার দরকার নেই; বরং যেমন ছিল তেমন করেই মাটি দিয়ে তৈরী করে দাও। তারা তাই করল।

(
মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্যিক্)

.........................ফেসবুক থেকে সংগৃহীত..........................................