শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৩

রাসুল (স) এর সময় কালের দুটি বিয়ের কথা



রাসুল () এর সময় কালের দুটি বিয়ের কথা

মদিনা থেকে সুদুর সিরিয়ায় ছুটলেন হযরত বিলাল (রাঃ) সেখানে একটি বাড়ির দরজায় এসে দাড়ালেন অচেনা অজানা এক দেশে অচেনা কারো বাড়ী দরজার কড়া নাড়লেন, সালাম দিলেন ভেতরথেকে বাড়ির কর্তা এসে দরজা খুললেন পরিচয় জানতে চাইলেন হযরত বিলাল পরিচয় দিলেন যেআমি বিলাল, মদিনা থেকে এসেছিবাড়ির কর্তা শুধালেনআপনিই কি মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন বিলাল?” বিলাল (রাঃ) বললেনহ্যাঁএবার বাড়ির মালিক তাকে ভেতরে নিলেন, মেহমান কে বসতে দিলেন পরিশেষে বিলাল (রাঃ) এর তার বাড়িতে আগমনের উদ্দেশ্য জানতে চাইলেন বিলাল বললেনরাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নির্দেশে আমি আপনার কাছে এসেছি, তিনি বলেছেন আপনারা যদি রাজি থাকেন তাহলে আমি যেনো আপনাদের মেয়েকে বিয়ে করিএকথা শুনে বাবা তার মেয়েকে ডাকলেন এবং বললেনরাসুলুল্লাহ (সঃ) এই লোকটিকে পাঠিয়েছেন তোমার সাথে এর (বিলালের) বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তুমি কি রাজি?” মেয়েটি বল্লযেখানে আল্লাহর রাসুল আমার জন্য পাত্র পছন্দ করে পাঠিয়েছেন সেখানে আমার কিইবা বলার থাকতে পারে?” ব্যাস হয়ে গেল! বিয়ে হয়ে গেল!! একজন সুন্দরী যুবতী মেয়ে কালো হাবসী গোলামের কাছে দিব্যি বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো!!! কোন ঢোল নেই, তবলা নেই, গায়ে হলুদ নেই, বউ ভাত নেই, ফিরানি নেই, মেয়ে দেখাদেখি নেই, আকাশ চুম্বি মোহরানার জন্য হাউকাউ নেই, যৌতুক নেই, কৌতুক নেই কিচ্ছু নেই

একদিন রাসুলুল্লাহ (সঃ) এক যুবক সাহাবীর সাথে কথা বলছিলেন এমন সময় রাসুলের কাছে একজন যুবতীমেয়ে এলো কিছু জরুরী বিষয়ে আলোচনা করতে রাসুলুল্লাহ (সঃ) মেয়েটির সাথে কথা বলছিলেন এমন সময় খেয়াল করলেন পাশের যুবকটি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে রাসুল (সঃ) নিজের হাত দিয়ে ছেলেটির মাথাটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন কিছুক্ষন পর ছেলেটি আবার তাকালো রাসুল (সঃ) আবারো তাই করলেন কিন্তু ছেলেটি আবারো একই কাজ করলো, মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো এবার রাসুলুল্লাহ (সঃ) ছেলেটিকে প্রশ্ন করলেনতুমি কি মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাও?” ছেলেটিহ্যাঁসুচক জবাব দিলো এবার রাসুলুল্লাহ (সঃ) মেয়েটির দিকে ঘুরলেন, তাকে জিজ্ঞেস করলেনতুমি কি তাকে বিয়ে করতে রাজি?” মেয়েটিও তার সম্মতি জানালো ব্যাস হয়ে গেল! বিয়ে হয়ে গেল!!

এবার তথাকথিতফ্রীতথা প্রগতীশীল সমাজের দিকে তাকান গাছের ছায়ায়, চিপায় চাপায় গিয়ে পুরো বছর প্রেমরসের অমিয় ধারায় শিক্ত হও তাতে কোন সমস্যা নাই কোন লম্বা প্রসিডিওর নাই গার্ল ফ্রেন্ড আর বয় ফ্রেন্ডের ডলাডলিতে দুনিয়া গন্ধ হয়ে যাক তাতেও সমস্যা নাই, কোন লম্বা প্রসিডিওর নাই কিন্তু যখনি বিয়ের কথা আসে তখনি কেন যেন প্রসিডিওরটা হাজার ক্রোশ লম্বা হয়ে যায় অনেক কে তো দেখলাম বছর তিনেক খালি উপযুক্ত পাত্র/পাত্রি খুজতই কাটিয়ে দিলেন হায়রে মানুষ! কত রঙ দেখালি তোরা!! আসলে তথাকথিত এই প্রগতিশীল সমাজটা প্রগতীর নামে আদতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের দিকে যাত্রা করছে

যাই হোক বলছিলাম বিয়ের কথা বিয়ে করতে হলে এটা করো, ওটা করো, সিরিয়াল মেইন্টেইন করো, পড়াশোনা শেষ করো, চাকরি পাও, নিজের পায়ে দাড়াও আরও কতো কি! শুধু কি তাই! নিজের পায়ে দাড়ালেই কি সব শেষ হয়? না আরো আছে চৌদ্দ জায়গায় বায়োডাটা পাঠাও, মেয়ের জন্য খানেক ছেলে দেখো, ছেলের জন্য খানেক মেয়ে দেখো এটা মিল্লে ওটা মেলে না আরও কতো সাত-পাঁচ করে যখন মেয়ে বা ছেলে পছন্দ হয় তখন অমুক তারিখ তমুক তারিখ করতে করতে আরও কিছু তাফালিং মোহরানা নিয়ে ক্যাচাল, একেকজন তখন মনে হয় গরু ব্যাপারি বনে যান উচ্চ শিক্ষিত লোকদের আসল হীনতা যে এসব তর্জন গর্জনে স্পষ্ট দেখা যায় তা এখন থেকে মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করুন বুঝতে পারবেন আচ্ছা মেয়েটাকি কোরবানীর হাটের গরু নাকি যে তার জন্য লাখ বিশেক দাম হাঁকাতে হবে? যারা বিয়ে করতে যাচ্ছে তারা কি তাদের পারপ্সপরের সাথে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক গড়তে যাচ্ছে? নাকি আত্মিক সামাকিজ বন্ধন গড়তে যাচ্ছে? যে টাকায় সব কিছু গোনা লাগবে? এদের মাঝে যদি আমরা সুন্দর মানবিক সামাজিক বন্ধনই তৈরী করে দিতে না পারলাম তাহলে কোটি টাকার কাবিন দিয়ে হবেটা কি? ওটা ধুয়ে ধুয়ে পানি খেলেও কি শান্তি আসবে? যত্তসব শিক্ষিত গন্ডমুর্খ

এর পর কি হয়, সব কিছু ঠিক-ঠাক হয়ে গেলে মেহমানদের তালিকা বানাও, কার্ড ছাপাও, দাওয়াত দাও অমুকের কাছে স্বশরীরে যেতে হবে তমুককে ফোনে বললে হবে না মার্কেটে যাও, গহনা কিনো, শাড়ী কিনো, হলুদ মাখো এটা সেটা কতো কি! ভাবখানা এমন যে এগুলো না হলে বিয়ে হবে না আর আগুলো না হলে নাকি সংসার করা দায় হয়ে যায় যত্তসব আজগুবী ধ্যান-ধারনা

একটি বৈধ বলে স্বিকৃত সম্পর্কের আগে যদি এতো লম্বা জটিল প্রক্রিয়ার পাহাড় থাকে তাহলে কার এতো ঠ্যকা পড়েছে এতদিন ধরে অসয্য এসব কান্ডকারখানা সওয়ার? যেখানে সে চাইলেই একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে সক্ষম হচ্ছে, শুধু তাই নয় বরং মেয়েকে যেভাবে চাইছে সেভাবে পাচ্ছে, সেখানে এতো লম্বা প্রক্রিয়া অনুসরন করার মতো পাগলামি সে করতে যাবে কেন? আমাদের সমাজে অনৈতিকতা দিন দিন যে বাড়ছে তার একটি কারন হচ্ছে নৈতিক কাজ করতে সবাইকে অনেক জটিল সব ফাঁদ পাড়ি দিতে হয় এই ফাঁদ গুলোর একেকটা একেকটার চেয়ে বেশী অনিশ্চয়তায় ভরা উদাহরন দিয়ে বলতে হলে বলতে হয় যে, আমাদের দেশে দুর্নীতির সয়লাব কেন হয়েছে তা চিন্তা করে দেখুন আইনি ধারায় সিদ্ধ পথে বা নৈতিক কোন পন্থায় প্রসাশনিক বা অপ্রসাশনিক যেকোন কাজ করতে গেলে তা দিনের পর দিন দৌড়ঝাপ করেও সমাধা করা যায় না অথচ জায়গা মতো কিছু পাত্তি দিলেই তিন মাসের কাজ তিন ঘন্টায় হয়ে যাচ্ছে তাই দুর্নীতি করতে দেশের মানুষ এক প্রকার বাধ্য তা না হলে বরং ক্ষতিই হয় বেশী, তাই অযথা ভালো সেজে কে মরতে যাবে? তাই সবাই দুর্নীতি করে আবার এরা সাবাই দুর্নীতিকে ঘৃনা করে তেমনি ভাবে অযথা কেউ আর একাকি বসে নেই, যখনি যুবকদের মনে একজন সঙ্গিনীর প্রয়োজন অনুভুত হয় তখনি সে গোপনে গোপনে অভিসারে লিপ্ত হয় কারন সে জানে বৈধ উপায়ে কিছু করতে হলে বাবা-মা কে বলতে হবে, আর বাবা-মা কে বললে ঠেঙ্গানি একটাও মাটিতে পড়বে না শুধুকি নিজের বাবা-মা কে নিয়ে সমস্যা? সমস্যাতো মেয়ের বাবা-মা কে নিয়েও, সেই সাথে সমাজের মানুষগুলোও বাদ যায় না অগ্যতা কি আর করা, সহজ জিনিস সহজ ভাবেই সে নিয়ে নিচ্ছে যাস্ট একটু অবৈধতার আঙ্গিকটাই যা সমস্যা

উপরে উল্লিখিত রাসুল () এর সময় কালের দুটি বিয়ের কথাই চিন্তা করুন কেমন ওপেন সোসাইটি হলে এমন সহজে ভালো বৈধ কাজ গুলো নিমেষেই সমাধা হয়ে যেতে পারে আমিতো চিন্তা করে মরি যে, যদি আমাদের কেউ কোন মেয়ের বাপ কে বলে যেআপনি রাজি থাকলে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতাহলে তার কি অবস্থা দাড়াবে কিল লাথি গুতা একটাও মাটিতে পড়বে কি না সন্দেহ তছাড়া ঝাড়ুর বাড়িতো আছেই কিন্তু বাবা কে কিছু না বলে মেয়েটাকে পটিয়ে যা ইচ্ছা তা করেন কোন সমস্যা নাই ধরা খাইলেও সমস্যা নাই কয়দিন ঘাড় ত্যাড়ামি করে ঠিকই ঘরে তুলে নেবে এজন্যই লোকে বলেগাধায় পানি খায় ঘোলাইয়া

বিশাল বিশাল চিন্তাবিদ, শরিয়তের শিরায় শিরায় তাদের গমনাগমন, কথা শেষ না হতেই ফতোয়া জারি হয়ে যায় এতো কোয়ালিফাইড স্কলাররাও আজ পর্যন্ত উপযুক্ত সময়ে সহজ উপায়ে বিয়ের ব্যপারে ইসলামের তাগাদার বিষয়টি মানুষকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেন নি এতো এতো চিন্তা গবেষনা করেও তারা বিয়ে-শাদির পেছনে এতো জটিল প্রক্রিয়াগুলোর ভয়ংকর অসুবিধা গুলো খুজে পান নি ভাবতেই অবাক লাগে আমার বিশ্বাস এই EMC গ্রুপে আমরা যেসব যুবকরা আছি তারাই এই ইস্যুটা জাতির কর্ন কুহরে পৌছে দিবো আমরা যুবসমাজের নৈতিক পদস্খলনের আরও কিছু কারন খুজে বের করে এক তুমুল সামাজিক আন্দোলনের সুচনা করতে চাই যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মুক্তির সোপানে পরিনত হবে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন এই EMC গ্রুপের সকল ভাই বোনদেরকে জানাই আমার সালাম অনারারি স্যালুট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন