বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

শাহাদাত (ইতিহাসের গল্প)




শাহাদাত (ইতিহাসের গল্প)


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলেন। বদর প্রান্তরে মুশরিকদের সঙ্গে মোকাবেলা হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একটি কিশোরও রওয়ানা হল। নাম তার উমায়র ইবনে আবী ওয়াক্কাস। বয়স ১৬ বছর।
উমায়েরের ভয় ছিল হয়তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যুদ্ধে নিবেন না। কারণ, সে ছোট। সে নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করছিল। যেন কেউ তাকে লক্ষ্য না করে। কিন্তু তার বড় ভাই সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস দেখে ফেলল। বলল, কী ব্যাপার আড়ালে থাকার চেষ্টা করছ কেন?
উমায়র বলল, ছোট হওয়ার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আমাকে ফিরিয়ে দেন। আমার খুব ইচ্ছা আমি যুদ্ধে যাবো। আশা করি আল্লাহ আমাকে শাহাদাত নসীব করবেন।

উমায়র যা আশঙ্কা করছিল তা-ই হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার দিকে তাকালেন দেখলেন সে ছোট। যুদ্ধ তো আর শিশু-কিশোররদের কাজ নয়। তারা যুদ্ধে গিয়ে কী করবে। বড়দের জন্যই তো যুদ্ধ অনেক কঠিন?
কিন্তু উমায়রের ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছিল না। ইচ্ছে করছিল না ঘরে বসে থাকতে। মদীনায় সাথী-সঙ্গীদের সাথে খেলা করতে। তার তো প্রবল ইচ্ছা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া। কিন্তু উমায়র আল্লাহর রাসূলের কথা অমান্য করেননি। কারণ সে তো আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা অমান্য করে কি আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে? কখনোই না।

উমায়র বেশ চিন্তিত হল— তার যুদ্ধ করার বয়স হয়নি। শাহাদাতের জন্য তার মন ব্যাকুল। আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যু পেতে প্রচণ্ড আগ্রহী। সে আগ্রহী জান্নাতের প্রতি। সে যেন জান্নাত দেখে খুব কাছ থেকে। কিন্তু জান্নাতে যাবে কী করে। তার তো যুদ্ধে যাওয়ার বয়সই হয়নি।
এসব কিছু উমায়রের কাছে কঠিন মনে হতে লাগল। তার ছোট্ট হৃদয় ভীষণ ব্যথিত হল। সে কেঁদে ফেলল। কান্না দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মন গলে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন নরম মনের মানুষ। তাকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন।

অনুমতি পেয়ে উমায়র কতটা খুশি হয়েছেন তা জিজ্ঞেস কর না। মনে হচ্ছিল সে যেন জান্নাতের টিকেট পেয়ে গেছে।
উমায়র তার ভাইয়ের সাথে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে বের হল। সবাই বড়। সবাই শক্তিশালী।
উমায়র যা আকাঙ্ক্ষা করেছিল তাই হল। সে যুদ্ধে শহীদ হল। অনেক যুবকও বৃদ্ধকে ছাড়িয়ে গেল।

আল্লাহ উমায়রের প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং তাকে সন্তুষ্ট করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উহুদ যুদ্ধে রওয়ানা হলেন, তার সাথে অনেক কিশোর রওয়ানা হল। তারা ছিল ছোট। বয়স পনেরও হয়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ফিরিয়ে দিলেন। কারণ, তারা ছোট। যুদ্ধের বয়স হয়নি। শত্রুর সাথে যুদ্ধের পরিবর্তে তাদেরকে বড়দের দেখেশুনে রাখতে হবে। পাহারা দিতে হবে।
এই কিশোরদের একজন হল রাফ’ ইবনে খাদীজ। তার বয়সও ছিল পনেরর কম। নিজেকে সে বড় জাহির করার চেষ্টা করছিল। যেন সবাই তাকে বড় মনে করে যে, সে যুদ্ধের বয়সে উপনীত হয়েছে। কেউ যেন না বোঝে সে ছোট। সে দুর্বল।
কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ফিরিয়ে দিলেন। কারণ, তিনি জানেন সে ছোট। সে নিজেকে লম্বা জাহির করার চেষ্টা করছে। তার বাবা সুপারিশ করল। বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ছেলে রাফে’ ভালো তিরন্দাজ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি দিলেন।
অনুমতি পেয়ে রাফে’ অনেক খুশি হল। মুজাহিদদের সাথে রওয়ানা হল ঈদের দিন নতুন জামা পরে ঈদগাহে যাবার শিশুর চেয়েও সে বেশি উৎফুল্ল। রাফে’এর ছিল আরেক ভাই। নাম সামুরা। সে রাফের কাছাকাছি বয়সের। রাফের পর তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে আনা হল। ছোট হওয়ার কারণে তাকেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরিয়ে দিলেন। সামুরা বলল, আপনি রাফে’কে অনুমতি দিলেন আর আমাকে ফেরত পাঠালেন। রাফের সাথে কুস্তি লাগলে আমিই জয়ী হব।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামুরা ও রাফে’কে কুস্তি লড়ার আদেশ দিলেন। সামুরা রাফে’কে পরাজিত করল। তাই সে মুজাহিদদের কাতারে শামিল হওয়ার যোগ্য প্রমাণিত হল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামুরাকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। সামুরা যুদ্ধে গেল। উহুদের দিন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করল।
আল্লাহ রাফে’ ও সামুরার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। আমাদেরকে তাদের অনুসরণ করার তৌফীক দান করুন। আমীন।


সূত্রঃ http://islamicgolpo.com/শাহাদাত-ইতিহাসের-গল্প/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন