রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩

যদি তুমি পবিত্র কোরআনে বিশ্বাসী হও


যদি তুমি পবিত্র কোরআনে বিশ্বাসী হও


একবার জাহাম ইবনে সফওয়ান- ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ) –এর খেদমতে হাজির হয়ে বলল, কতিপয় মাসআলা নিয়ে আপনার সাথে আলোচনা  করার উদ্দেশ্যে আমি এসেছি
ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ)- তোমার সাথে কথা বলা লজ্জার ব্যাপার  এবং তোমরা যে বিষয়ে প্রবেশ করেছো , তাতে অংশ গ্রহণ আগুনে প্রবেশ সদৃশ
জাহাম ইবনে সফওয়ানঃ- আমার সাথে কোন আলাপ-আলোচনা ছাড়াই আপনি এই অভিমত ব্যক্ত করলেন?
ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ)- তোমাদের যে সব অভিমত দৃষ্টিভঙ্গি আমার পর্যন্ত বিশ্বস্ত  সুত্রে পৌঁছেছে, তা কোন  মুসলমানের অভিমত হতে পারে না

জাহাম ইবনে সফওয়ানঃ- আপনি না  জেনে-বুঝে আমার ব্যাপারে ফয়সালা দিচ্ছেন ?
ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ)- তোমাদের সব অভিমত সুপ্রসিদ্ধ সাধারণঅসাধারণ সকল মানুষই তা জানে সুতরাং আমি সম্পুর্ণ আস্থার সাথেই তোমার ব্যাপারে যা বলার বলেছি
জাহাম ইবনে সফওয়ানঃ- আমি আপনাকে শুধু ঈমানের স্বরূপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছি
ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ)- তুমি এখনো ঈমানের স্বরূপ জানতে পারনি  যে প্রশ্নের প্রয়োজন  পড়ল?
জাহাম ইবনে সফওয়ানঃঈমানের একটি দিকের ব্যাপারে আমার সন্দেহ হচ্ছে , তা দূরিভূত করতে চাই
ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ)- ঈমানের মাঝে  সন্দেহ  করা হচ্ছে কুফুরী
জাহাম ইবনে সফওয়ানঃ- কুফুরীর কারণ আমাকে জানানো আপনার জন্য সমীচিন হবে না
ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ)- বল, কি বলতে চাচ্ছ?
জাহাম ইবনে সফওয়ানঃ- এক ব্যক্তি তার অন্তর দ্বারা আল্লাহ্কে চিনল এবং জানল যে , তিঁনি এক-অদ্বিতীয় ,তাঁর সমতূল্য সমকক্ষ কেউ নেই , তাঁর গুণাবলী  সম্পর্কেও
সে অবগত; কিন্তু সে এসব বিষয়  স্বীকার ব্যতীতই মরে গেল ব্যক্তির মৃত্যু কি কুফুরীর ওপর  হল, না ইসলামের ওপর ?
ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ)- ব্যক্তি কাফের ,জাহান্নামী অন্তরের বিশ্বাসের সাথে মুখের স্বীকৃতির সমন্বয়  না থাকলে তা কুফুরী
জাহাম ইবনে সফওয়ানঃ- কেমন করে সে মুমিন নয়, যখন সে আল্লাহ্কে তাঁর গুনাবলী সহ বিশ্বস করল ?

ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ)- যদি তুমি পবিত্র কোরআনে বিশ্বাসী হও  এবং  ইসলামী শারীআতকে হুজ্জত  বলে গ্রহ্ণ কর , তবে আমি কোরআন এর দলিল পেশ করবো আর যদি এমনটি না হয় ,তবে আমি তোমার সাথে সে পরিমাপেই কথা বলবো , যেভাবে ইসলাম বিরোধীদের সাথে হয়ে থাকে
জাহাম ইবনে সফওয়ানঃ-আমি কোরআনের ওপর  বিশ্বাসী  এবং একে  হুজ্জত  বলে বিশ্বাস করি
ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ)-আল্লাহ্তাআলা পবিত্র কোরআনে ঈমান কে দুটি অঙ্গের  সাথে সম্পর্কিত করেছেন একটি হল ,হৃদয়-মন, দ্বিতীয়টি ভাষা বা উচ্চারণ
যেমন  ইরশাদ হচ্ছে……
তারা রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যখন শোনে তখন তাদের চোখ অশ্রুসজল দেখতে পাবেন কারণে যে ,তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে তারা বলে , হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা বিশ্বাস করেছি, সূতরাং তুমি আমাদেরকে মান্যকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর আমাদের কি উযর থাকতে পারে যে , আল্লাহ্ প্রতি এবং যে সত্য আমাদের কাছে এসেছে তৎপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবো না এবং আশা করব না যে, আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে সৎ লোকদের অন্তর্ভূক্ত করবেন ? তাদের কথার জন্য আল্লাহ্তাদের পু্রস্কার নির্দিষ্ট  করেছেন জান্নাত্‌ ,যার তলদেশে নদী প্রবাহিত তারা সেখানে স্থায়ী হবে এই হল সৎ্কর্মপরায়ণদের পু্রস্কার  ………(সূরামায়েদা-৮৩-৮৫)


ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ)- বলেন , এই আয়াতে মহান আল্লাহকে উপলদ্ধি বা জানা এবং স্বীকৃতিকে জান্নাতী হওয়ার কারণ বলেছেন এবং হৃদয় মুখের উচ্চারণ বা স্বীকৃতিকে  মোমিন হওয়ার কারণ সাব্যস্ত  করেছেন
আল্লাহ্তাআলা  আরও ইরশাদ করেছেন-……
তোমরা বল , আমরা আল্লাহতে ঈমান রাখি , যা আমাদের প্রতি এবং ইব্রাহীম (আঃ),ইসমাঈল(আঃ), ইসহাক (আঃ),ইয়াকূব(আঃ), তাঁর বংশধরগণের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে
আরও ইরশাদ হয়েছে-… যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী , তাদেরকে ইহজীবনে পরজীবনে  আল্লাহ্সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন…(সূরাইবরাহীম-২৭)

এখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী শোন……
তোমরালা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু’-বল সফল্-কাম হবে
এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, কামিয়াবী সফলতা উপলব্ধি  জানার মধ্যে নয় ,বরং এতে বলা বা স্বীকৃতিও সম্পৃক্ত রয়েছে
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন
যে ব্যক্তি মুখেলা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌’ বলল এবং সে ব্যক্তি হৃদয়েও তার প্রতি ঈমান রাখে ,তবে সে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে
এখানে তিঁনি বলেন নি যে, যে ব্যক্তি অন্তরে  আল্লাহ্ পরিচয় উপলব্ধি করল তাকে  জাহান্নাম থেকে বের করা হবে  বরং  বলেছেন , যে ব্যক্তি মুখে এই কালিমা- “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহুবলবে , সে মুক্তি পাবে

যদি  হৃদয়ের উপলব্ধি যথেষ্ট হত এবং মুখের স্বীকৃতির কোন প্রয়োজন না হত , তবে যে ব্যক্তি মুখে আল্লাহ্কে অস্বীকার করে , সে আল্লাহর পরচিতি উপলব্ধি করে বা জেনে মুমিন হয়ে যেত
এমতাবস্থায় ইবলিস শয়তানেরও মুমিন হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না
কেননা আল্লাহ্পরিচিতি উপলব্ধি তার মধ্যে ছিল সে সম্যক অবগত ছিল যে , আল্লাহ্তাআলা তার সৃষ্টিকর্তা, মৃত্যুদাতা , জীবনদাতা এবং তাকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুতকারী
যেমন ইবলিস বলেছিল
প্রভূ হে! আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট  করেছেন(সূরা-হিজর-৩৯)
তারপর বলেছিল…“তাই কিয়ামত দিবস পর্যন্ত  আমাকে অবকাশ দিন (সূরা-হিজর-৩৬)
আরো বলেছিল
আপনি আমাকে অগ্নি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং  তাকে মাটি হতে  (সূরা-ছ্বদ্ব-৭৬)
যদি শুধু  আল্লাহ্ পরচিতি জানা উপলব্ধি ঈমান হত , তবে কাফির সম্প্রদায়ের আল্লাহর পরচিতি জানার পরও মুখে অস্বীকৃতি  সত্ত্বেও তারা মুমিন হত
অথচ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন
বিশ্বাস করা  সত্ত্বেও তারা অস্বীকার করেছিল(সূরা-নম্ল-১৪)
এই আয়াতে আল্লাহ্ একত্ববাদের বিশ্বাস রাখা  সত্ত্বেও  তাদেরকে মুমিন বলা হল না , কেননা তারা মুখে অস্বীকার  করেছিল
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন
তারা আল্লাহ্ নিয়ামত-রাজী সম্পর্কে জেনেও অস্বীকার  করে,    তাদের অধিকাংশই কাফির    (সূরা-নাহল-৮৩)
উপরোক্ত আয়াতসমুহের মর্মবাণীর ওপর চিন্তা করলে স্পস্ট বুঝা যায় যে, মুখের স্বীকৃতি ছাড়া শুধু উপলব্ধি কোন কাজের নয় কাফের-গণের জানার ব্যাপারে কোন ত্রুটি ছিল না
যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন……
তারা আপনাকে এমনভাবে চিনে যেমন তারা তাদের সন্তানদের চিনে  (সূরা-বাকারা-১৪৬)
যখন ইমামে যম আবূ হানিফা (রঃ)- এসব দলীলপ্রমাণ উপস্থাপন করলেন তখন জাহাম ইবনে সফওয়ান বললেন, আপনি আমার হৃদয় রাজ্যকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন পুণরায় আমি আপনার সান্নিধ্যে হাজির হবো ………আল-মানাকিবমাক্কী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন