রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩

তারা মুসলিম , না কাফির ?



তারা মুসলিম , না কাফির ?

একদা খারেজী সম্প্রদায়ের শতাধিক লো্ক নাঙ্গা তলোয়ার নিয়ে ইমামে  যম  আবূ হানীফা(রঃ) -এর ওপর চড়াও হল। তারা বলল, যে লোক কবীরা গো্নাহ করে তাকে আপনি যেহেতু কাফের মনে করেন না তাই আপনাকে হত্যা করা হবে। ইমামে  যম  আবূ হানীফা(রঃ) বললেন, আবেগ প্রবণতা পরিহার করে শান্ত মস্তিষ্কে কাজ করুন সত্য বিষয় উদ্ঘাটনের চেষ্টা করুন আমার অপরাধ যদি প্রমাণিত হয়,তাহলে হত্যা করার পদক্ষেপ নিতে পারেন
আপনারা আগে তরবারি কোষবদ্ধ করুন  এবং ধীর স্থীরতার  সাথে আপনাদের প্রশ্ন গুলো উথথাপন  করুন এরপর যা করতে চান করতে পারেন
তারা বললঃ
পনার রক্তে আজ় আমাদের তরবারি রঙ্গীন হবে
আমাদের আকীদা মোতাবেক – ‘কোন অপরাধীকে হত্যা করতে পারলে তা সত্তর বছর আল্লাহর রাস্তায় জ়িহাদ করা থেকে উত্তম
ইমামে  যম  আবূ হানীফা(রঃ) ভাল কথা , তবে কি বলতে চান ? বলুন
খাওয়ারেজঃ মনে করুন ঘরের বাহিরে দুটি জ়ানাযা আছে
একটি পুরুষের অপরটি মহিলার
পুরুষ ছিল মদ্যপায়ী অতিরিক্ত মদ পানের কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে  সে মারা যায়
আর মহিলা ছিল ব্যাভিচারিনী। গর্ভ ধারণের ভয়ে সে আত্মহত্যা করেছে দুই মৃতের ব্যাপারে আপনার মতামত কি ?
তারা মুসলিম , না কাফের ?
ইমামে  যম  আবূ হানীফা(রঃ) –তাদেরকে জ়িজ্ঞেস করলেন , আচ্ছা বলুন , তারা কি ইহুদী ছিল? নাছারা ছিল ? না  অগ্নিপূজ়ারী ছিল?
খাওয়ারেজঃ- না, তারা ইহুদীও  ছিল না ,নাছারাও ছিল নাঅগ্নিপূজ়ারীও ছিল না
ইমামে  যম  আবূ হানীফা(রঃ)-  তাহলে কোন ধর্মের সাথে  তাদের সম্পরক ছিল ?
খাওয়ারেজঃতাদের সম্পর্ক ছিল এমন ধর্মের সাথে  যে ধর্মের  লোকেরা কালিমায়ে শাহাদাত পড়ে
ইমামে  যম  আবূ হানীফা(রঃ)- আচ্ছা , কালিমায়ে শাহাদাত ঈমানের কত ভাগ?

অর্ধেক ? এক তৃ্তীয়াংশ ? না এক চতুর্থাংশ ?
খাওয়ারেজঃ- এটিই তো পূর্ণ ঈমান ঈমানের কোন ভগ্নাংশ হয় না
ইমামে  যম  আবূ হানীফা(রঃ)-এই কালিমাই যদি পুর্ণ ঈমান হয়ে থাকে  , তাহলে তারা তো কালিমায়ই বিশ্বাসী ছিল তাদেরকে আপনারা কী বলবেন ?
মুসলিম , না কাফির ?
খারেজীরা পেরেশান  কোন উত্তর খুজে পাচ্ছে না কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলল , আচ্ছা সে কথা বাদ দিন
এখন বলুন , তারা জান্নাতঈ না জ়াহান্নামী ?

ইমামে  যম  আবূ হানীফা(রঃ)- প্রশ্নের  জবাবে আমি সে কথাই বলবো হযরত ইবরাহীম (আঃ) এদের চেয়ে আরো জঘন্যতম অপরাধী সম্প্রদায় সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছিলেন
সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে,সেই আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ যদি আমার অবাধ্য হয়, আপনি  তো তাদের ব্যাপারে ক্ষমাশীল পরম দয়ালু  (সূরাইবরহীম৩৬)
আর কথাই বলব যা হযরত ঈসা (আঃ) এদের চেয়েও বড় গোনাহগার সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেছিলেন
আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা তো আপনারই বান্দা আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা     করেন , তাহলে তবে আপনি তো পরক্র্মশালী , প্রজ্ঞাময় (–সূরা মায়িদা-১১৮)

আর যখন হযরত নূহ (আঃ)কে তার সম্প্রদায় বলেছিলঃ-
আমরা তোমার প্র্তি  বিশ্বাস স্তাপন করবো , অথচ ইতরশ্রেণীর লোকেরা তমার অনুসরণ করে থাকে” ? (সূরা শুআরা-১১১)

তখন তিনি তাদের জবাবে বলেছিলেনঃ
তারা কী করতো তা আমার জানা নেই তাদের হিসাব নেয়া তো আমার প্র্তি পালকের কাজ, যদি তোমরা বুঝতে মোমেনদের তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয় (সূরা শুআরা-১১২)
হযরত নূহ (আঃ) যা বলেছিলেন আমি সে কথারই পুনরাবৃত্তি করবো
তোমাদের দৃষ্টিতে যারা হেয় , তাদের সম্নদ্ধে আমি না  যে , আল্লাহ্ তাদেরকে কখনো মঙ্গল দান করবেন না  তাদের অন্তরে যা আছে , আল্লাহ্ সম্যক অবগত তাহলে (তাড়িয়ে দিলেআমি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবো ( সূরাহূ৩১)
খারেজীরা  ইমামে  যম  আবূ হানীফা(রঃ)-এর যুক্তিসম্মত জবাব শুনে চুপ হয়ে গেলউন্মুক্ত তরবারী কোষবদ্ধ  করে নিল , খাটি মনে তওবা করল এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা মেনে  নিল
……..-আল মানাকিব-মাক্কী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন