হাশরের
ময়দানে দেখা
হবে' বলে
বাসর রাতে
স্ত্রী থেকে
বিদায় নেবার
গল্প
সাহাবাদের (রা)
কাহিনী পড়ে
অঝোরে কাঁদতে
থাকি... কী
ছিল তাদের
ভালোবাসা আল্লাহর
রাসূল (সা)
আর ইসলামের
জন্যে! আর
কোথায় আমরা?
নিজের শরীরটাকে
দুঃখে ছিন্নভিন্ন
করে ফেলতে
ইচ্ছা করে!
ইয়া আল্লাহ,
আমাদেরকে তাদের
মত করে
আত্মত্যাগ করার
তওফিক দাও,
আমীন!
সা'দ
আল আসওয়াদ
আস-সুলুমী
(রা)-এর
কথা কি
আপনারা জানেন?
নামটাও হয়তো
অনেকে শুনেন
নি কোনদিন।
তাঁর সমাজে
হাই-স্ট্যাটাস
ছিল না,
তিনি ছিলেন
গরীব, গায়ের
রঙ কালো।
কেউ তাঁর
কাছে নিজের
মেয়েও বিয়ে
দিতে চাইতো
না।
সা'দ
(রা) একদিন
আল্লাহর রাসূল
(সা) এর
কাছে দুঃখ
করে বলেছিলেন,
'ইয়া রাসূলুল্লাহ!
আমিও কি
জান্নাতে যাবো?'
'আমি তো নীচু
মাপের ঈমানদার
হিসেবে বিবেচিত
হই'
'কেউ আমাকে নিজের
মেয়ে দিতে
রাজি হয়
না'
রাসূলুল্লাহ (সা)
সাহাবীদের দুঃখ
বুঝতেন নিজের
আপন ভাইয়ের
মত করে,
নিজের সন্তানের
মত করে।
তিনি তাদেরকে
অনুভব করতেন
অন্তরের অন্তঃস্থল
থেকে। তিনি
এই সা'দকে পাঠিয়েছিলেন ইবন
আল-ওয়াহহাবের
কাছে। সাধারণ
কোন ব্যক্তি
ছিলেন না
ইবন ওয়াহহাব।
তিনি হলেন
মদীনার নেতাদের
একজন; কিছুদিন
যাবৎ মুসলিম
হয়েছেন। তাঁর
মেয়ে অপরূপা
সুন্দরী রমণী,
রূপের জন্য
বিখ্যাত। সেই
ইবন ওয়াহহাবের
মেয়েকে বিয়ে
করার জন্য
রাসূলুল্লাহ (সা)
সা'দকে
পাঠালেন।
নেতার মেয়ে
বিয়ে করবে
সা'দের
মতো একজনকে?
যে তার
সৌন্দর্য্যের জন্য
এতো প্রসিদ্ধ,
সে হবে
সা'দের
বউ?? স্বাভাবিকভাবেই
ইবন ওয়াহহাবের
প্রতিক্রিয়া ছিল
'আকাশ-কুসুম
কল্পনা ছেড়ে
বাড়ি যাও'...
কিন্তু তাঁর
মেয়ে ততক্ষণে
শুনে ফেলেছে।
সে বলে
উঠলো, 'বাবা!
আল্লাহর রাসূল
(সা) অনুরোধ
করেছে তাকে
বিয়ে করার
জন্যে, তুমি
কিভাবে উনাকে
ফিরিয়ে দিতে
পারো?
রাসূলের উৎকণ্ঠা
থেকে আমরা
মুখ ফিরিয়ে
নিলে আমাদের
অবস্থানটা কি
হবে?' এরপর
সা'দের
দিকে ফিরে
বললো, 'রাসূলুল্লাহ
(সা) কে
যেয়ে বলে
দিন, আমি
আপনাকে বিবাহ
করার জন্য
প্রস্তুত'
সা'দের
মন সেদিন
আনন্দে পুলকিত...
সে যেন
খুশিতে টগবগ
করে ফুটছে...
রাসূলুল্লাহ (সা)
৪০০ দিনার
মোহরানায় তাদেরকে
বিয়ে দিয়ে
দিলেন। আলহামদুলিল্লাহ!
সুবহান আল্লাহ!
সা'দ
বললেন, হে
রাসূল, আমি
তো জীবনে
কোনদিন চারশ
দিনার দেখিই
নি! আমি
এই টাকা
কীভাবে শোধ
করবো? নবীজি
(সা) তাকে
বললেন, আলী
আল-নু'মান ইবন আউফ
আর উসমান
(রা) এর
কাছ থেকে
দুইশ দুইশ
করে মোট
চারশ দিনার
নিয়ে নিতে।
দুজনেই উনাকে
দুইশর-ও
বেশি করে
দিনার দিলেন।
আলহামদুলিল্লাহ! টাকার
জোগাড় ও
হয়ে গেলো।
এখন নতুন
বউ এর
কাছে যাবেন
সা'দ
(রা)...
মার্কেটে যেয়ে
সুন্দরী বউ
এর জন্যে
টুকিটাকি কিছু
উপহার কেনার
কথা চিন্তা
করলেন তিনি।
মার্কেটে পৌঁছে
গেছেন, হঠাৎ
তাঁর কানে
আসলো জিহাদের
ডাক। 'যুদ্ধের
জন্য প্রস্তুত
হয়ে যাও'
... সা'দ
যেখানে ছিলেন
সেখানেই দাঁড়িয়ে
গেলেন। আকাশের
দিকে তাকালেন
একবার, বললেন-
'হে আল্লাহ!
আমি এই
টাকা দিয়ে
এমনকিছু কিনবো
যা তোমাকে
খুশি করবে।'
নতুন বউ
এর জন্য
গিফট কেনার
বদলে তিনি
কিনলেন একটি
তরবারি আর
একটি ঘোড়া।
এরপর ঘোড়া
ছুটিয়ে চললেন
জিহাদের ময়দানে,
নিজের চেহারাটা
কাপড় দিয়ে
মুড়ে নিলেন,
যেন আল্লাহর
রাসূল (সা)
তাকে দেখে
চিনে ফেলতে
না পারেন।
কারণ রাসূলুল্লাহ
(সা) তাকে
দেখলেই তো
বাড়িতে পাঠিয়ে
দিবেন! সে
যে সদ্য-বিবাহিত! সাহাবারা (রা)
বলাবলি করছিলেন,
যুদ্ধ করতে
আসা এই
মুখ-ঢাকা
লোকটি কে?
আলী (রা)
বললেন, 'বাদ
দাও, সে
যুদ্ধ করতে
এসেছে।' ক্ষিপ্ততার
সাথে সা'দ যুদ্ধ করতে
থাকলেন, কিন্তু
তাঁর ঘোড়ায়
আঘাত হানা
হলো, ঘোড়া
পড়ে গেলো।
সা'দ
উঠে দাঁড়ালেন।
ঐ সময়
নবীজি (সা)
তার কালো
চামড়া দেখে
ফেললেন, 'ইয়া
সা'দ
এ কি
তুমি?!' রাসূল
(সা) এর
প্রশ্নের জবাবে
তিনি (রা)
বললেন 'আমার
মা-বাবা
আপনার উপর
উৎসর্গিত হোক
ইয়া আল্লাহর
রাসূল! হ্যাঁ,
আমি সা'দ'
মুহাম্মাদ (সা)
বললেন, 'হে
সা'দ,
জান্নাত ছাড়া
তোমার জন্য
আর কোন
আবাস নেই।'
সা'দ
(রা) আবারো
জিহাদে ঝাঁপিয়ে
পড়লেন। কিছু
সময় পর
কয়েকজন বললো
সা'দ
আহত হয়েছে।
রাসূল (সা)
ছুটে গেলেন
ময়দানে। সা'দকে খুঁজতে লাগলেন।
সা'দের
মাথা খানা
নিজের কোলের
উপর রেখে
কাঁদতে শুরু
করলেন। তাঁর
অশ্রু গড়িয়ে
গড়িয়ে সা'দের মুখের উপর
এসে পড়ছিলো।
তাঁর (সা)
চোখ বেয়ে
নেমে আসছিলো
অঝোর ধারা।
একটু পর
রাসূলুল্লাহ (সা)
হাসতে শুরু
করলেন, আর
তারপর মুখ
ফিরিয়ে নিলেন।
আবু লুবাবা
(রা) নামের
একজন সাহাবা
উনাকে দেখে
বিস্ময়ে বললেন,
'হে রাসূলুল্লাহ
(সা) আমি
আপনাকে এমনটি
কখনো করতে
দেখি নি'...
আল্লাহর রাসূল
(সা) বললেন,
'আমি কাঁদছিলাম
কারণ আমার
প্রিয় সঙ্গী
আজ চলে
গেলো! আমি
দেখেছি সে
আমার জন্য
কী ত্যাগ
করলো আর
সে আমাকে
কতো ভালোবাসতো...
কিন্তু এরপর
আমি দেখতে
পেলাম তার
কী ভাগ্য,
আল্লাহর কসম,
সে ইতিমধ্যে
হাউদে পৌঁছে
গেছে।' আবু
লুবাবা জিজ্ঞেস
করলেন 'হাউদ
কি?' রাসূলুল্লাহ
(সা) বললেন,
'এটি হলো
এমন এক
ঝর্ণা যা
থেকে কেউ
একবার পান
করলে জীবনে
আর কোনদিন
পিপাসার্ত হবে
না, এর
স্বাদ মধুর
চেয়েও মিষ্টি,
এর রঙ
দুধের চেয়েও
সাদা! আর
যখন আমি
তাঁর এইরূপ
মর্যাদা দেখলাম,
আল্লাহর কসম,
আমি হাসতে
শুরু করলাম।'
'তারপর আমি দেখতে
পেলাম সা'দের দিকে তাঁর
জান্নাতের স্ত্রীগণ
এমন উৎফুল্ল
ভাবে ছুটে
আসছে, যে
তাদের পা
গুলো বের
হয়ে পড়ছে,
তাই আমি
চোখ ফিরিয়ে
নিলাম।'
নবীজি অতঃপর
সাহাবাদের কাছে
এসে বললেন
সা'দের
ঘোড়া আর
তরবারি নিয়ে
আসতে, সেগুলো
যেন সা'দের স্ত্রীর কাছে
নিয়ে যাওয়া
হয়, তাকে
যেন বলা
হয় এগুলো
তার বংশধর।
তিনি (সা)
বললেন, তাকে
জানিয়ে দিও
আল্লাহ তা'আলা সা'দকে
জান্নাতে স্ত্রী
দান করেছেন,
তারা তার
চাইতেও অনেক
সুন্দর। এই
হলো সা'দ, যিনি কিছুক্ষণ
আগেও অনিশ্চিত
ছিলেন যে
সে জান্নাতে
যেতে পারবে
কী না।
সমাজে তার
কোন মর্যাদা
ছিল না,
কোন স্ট্যাটাস
ছিল না,
কিন্তু আল্লাহর
চোখে এই
হলো তাঁর
স্ট্যাটাস। কারণ
তাঁর জীবন
এবং মরণ
ছিলো শুধুমাত্র
আল্লাহরই জন্যে...।
''নিঃসন্দেহ আমার
নামায ও
আমার কুরবানি,
আর আমার
জীবন ও
আমার মরণ
- আল্লাহ্র জন্য যিনি
সমস্ত বিশ্বজগতের
প্রতিপালক' [সূরাহ
আন'আমঃ
আয়াত ১৬২]
'নিঃসন্দেহ আল্লাহ্
মুমিনদের কাছ
থেকে কিনে
নিয়েছেন তাদের
জান ও
মাল এই
মূল্যে যে,
তাদের জন্য
রয়েছে জান্নাত।
তারা যুদ্ধ
করে আল্লাহর
রাহেঃ অতঃপর
মারে ও
মরে। তাওরাত,
ইঞ্জিল ও
কোরআনে তিনি
এ সত্য
প্রতিশ্রুতিতে অবিচল।
আর আল্লাহর
চেয়ে প্রতিশ্রুতি
রক্ষায় কে
অধিক সত্যনিষ্ঠ?
সুতরাং তোমরা
আনন্দিত হও
সে লেনদেনের
উপর, যা
তোমরা করেছ
তাঁর সাথে।
আর এটিই
হচ্ছে মহা
সাফল্য। [সূরাহ
আত-তাওবাঃ
আয়াত ১১১]
সা'দের
জীবনকাহিনী শুনে
এ দু'টি আয়াতই মনে
পড়ে যায়...
আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে কবুল
করে নাও!
আমীন...
আমিন
উত্তরমুছুন