মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৩

কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী, মক্কায় ইয়াজিদি তাণ্ডব ও ক্রুসেডারদের বর্বরতা


কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী, মক্কায় ইয়াজিদি তাণ্ডব ও ক্রুসেডারদের বর্বরতা



ইসলামিকনিউজ ডেস্ক,১৩ডিসেম্বর: : আজ হতে ১৩৮৫ বছর আগে ৬২৭ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে (বুধবার, ২৭ মহররম) রোমান সেনাদের হাতে ইরানের সাসানীয় সম্রাটের সেনারা পরাজিত হলে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত মহান আল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণী প্রমাণিত হয়। এতে প্রমাণিত হয় যে কুরআন মানুষের রচিত কিতাব নয়, বরং ঐশী গ্রন্থ বা আল্লাহর কিতাব।
সে যুগের দুই প্রধান পরাশক্তি ছিল পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্য। পারসিক ও পূর্বাঞ্চলীয় রোমানদের মধ্যে যুদ্ধ লেগেই থাকত প্রায় সব সময়। মূর্তি-পূজারী আরবরা সে সময় অগ্নি উপাসক ইরানকে সমর্থন করত।quran
ইরাকের নেইনাভা বা নিনেভা অঞ্চলে সম্রাট হেরাক্লিয়াসের বাইজান্টাইন সেনারা পারস্য সম্রাট দ্বিতীয় খসরুর সেনাদের পরাজিত করে। পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের আর্মেনীয় সেনাপতি ‘রোখ ভিহান’ বা ‘রাহজাধ’ ছিলেন এই বিজয়ের স্থপতি। এ বিজয় রোমান ও পারসিকদের ২৬ বছরের যুদ্ধের ইতিহাসে সাসানীয় রাজবংশের ক্ষমতা ও দর্প চূর্ণ করে। যুদ্ধের প্রথমদিকে ইরানিরা ভূমধ্য-সাগর সংলগ্ন বিশাল অঞ্চল, মিশর ও আনাতোলিয়া বা আধুনিক তুরস্কের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করেছিল। এমনকি ইরানিরা বাইজান্টাইন রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বা বর্তমান ইস্তাম্বুল (ইসলামবুল) দখল করেছিল।
মূর্তি পূজারী আরবরা সে যুগের একত্ববাদী খ্রিস্টানদের ওপর অগ্নি উপাসক ইরানিদের বিজয়ে উল্লসিত হয়েছিল এবং তারা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কেও উপহাস করে বলেছিল, তোমার ক্ষুদ্র বা শিশু মুসলিম সম্প্রদায় শিগগিরই নির্মূল হবে। এর জবাবে মহান আল্লাহ সুরা রুমের প্রথম আয়াতে বলেছেন, যদিও রোমানরা নিকটবর্তী অঞ্চলে পরাজিত হয়েছে, তবুও তারা শিগগিরই বিজয়ী হবে।
কনস্টান্টিনোপলের ওপর ইরানি অবরোধের সময়ে হেরাক্লিয়াস রোমান সম্রাট হন এবং তিনি ক্ষমতাসীন হয়েই তুর্কি খাগানাত রাষ্ট্রের সঙ্গে জোট গড়ে তোলেন। এ রাষ্ট্রের সম্রাট তুর্কি উপজাতিদের নিয়ে গঠিত ৪০ হাজার সেনার এক শক্তিশালী বাহিনী পাঠায় পারস্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে। তারা ককেশাস অঞ্চলে ইরানি সাম্রাজ্যকে বিধ্বস্ত করার চেষ্টা চালায়, ফলে ইরানিরা রোমান ফ্রন্ট থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়। ইরাকে নিনেভার পর আরো কয়েকটি শহরের পতন ঘটলে ইরানি সেনারাই বিদ্রোহ করে দ্বিতীয় খসরুকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তারা ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে খসরুর ছেলে ‘দ্বিতীয় কাভাধ’-কে নতুন ইরানি সম্রাট করে। খসরুকে একটি কারাগারে রাখা হয়। কারাবাসের পঞ্চম দিনে কয়েকটি তীরের আঘাতে তাকে হত্যা করা হয়।
পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্য পরস্পর দীর্ঘ বহু বছর ধরে যুদ্ধ করে এতই দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে অল্প কয়েক বছর পরই তারা আরবের মরুচারী মুসলমানদের হাতে পরাজিত হয়। বিশ্বনবী (সা.) এই দুই পরাশক্তির সম্রাটকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। হেরাক্লিয়াস চিঠির প্রতি সম্মান দেখিয়েছিল। কিন্তু ইরানের খসরু অবজ্ঞাভরে রাসূল (সা.)’র চিঠি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে এবং হিজাজে হামলা চালাতে ইয়েমেনের গভর্নরকে নির্দেশ দেন। কিন্তু শিগগিরই সে নিহত হয়।
ইয়াজিদ বাহিনীর মক্কা অবরোধ ও কাবাঘরে অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ :
১৩৭০ বছর আগে এ দিনে পাষণ্ড ইয়াজিদের বর্বর সেনারা (কারবালার মহাঅপরাধযজ্ঞ সম্পাদনের তিন বছর পর) পবিত্র মক্কা অবরোধ করে। তারা মহান আল্লাহর ঘরে তথা পবিত্র কাবায় জ্বলন্ত ন্যাপথালিনযুক্ত অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ করে কাবা ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ফলে মক্কার বিশিষ্ট সাহাবীদের কাছে ইয়াজিদের খোদাদ্রোহী চরিত্রের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়।
এর এক মাস আগে ২৮ শে জ্বিলহজ্ব মুসলিম বিন উকবা আল-মাররির নেতৃত্বে ইয়াজিদ সেনারা পবিত্র মদীনায় হামলা চালায় এবং সেখানে তিন দিন ধরে লুণ্ঠন ও গণ-ধর্ষণে লিপ্ত হয়েছিল। এ যুদ্ধে নিহত হয়েছিল বহু বিশিষ্ট সাহাবীসহ প্রায় সাড়ে বার হাজার মদীনাবাসী। জন্ম নিয়েছিল হাজার হাজার অবৈধ সন্তান। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম মাওলানা শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী-র. প্রণীত ‘কারবালার পর পবিত্র মক্কা ও মদীনায় ইয়াজিদি তাণ্ডবলীলা’ শীর্ষক প্রবন্ধ)
ইয়াজিদ বাহিনী ইবনে নুমাইরের নেতৃত্বে মক্কায় হামলা চালানোর জন্য অগ্রসর হতে থাকার সময় মদীনায় অপরাধযজ্ঞ ও গণহত্যা অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী ইয়াজিদ-সেনাদের প্রধান মুসলিম বিন উকবা আকস্মিকভাবে মৃত্যুর শিকার হয়ে জাহান্নামবাসী হয়। আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়েরকে বন্দী বা হত্যা করাই ছিল মক্কায় ইয়াজিদ বাহিনীর হামলার লক্ষ্য। কিন্তু দেড় মাস পর মক্কা অভিযান ও পবিত্র কাবাঘরে রক্তপাতের অবসান ঘটে যখন খবর আসে যে কুখ্যাত নরপশু ইয়াজিদ মারা গেছে।
বিশ্বনবী (সা.)’র প্রিয় নাতি হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)সহ নবী পরিবারের বহু সদস্যকে কারাবালায় শহীদ করা এবং মক্কা ও মদীনাকে বিধ্বস্ত করা ছিল খোদাবিমুখ পাষণ্ড ইয়াজিদের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলের তিনটি বড় কুকীর্তি।
সিরিয়ায় বর্বর ক্রুসেডারদের হাতে বিশ হাজার মুসলমানের শাহাদত
আজ থেকে ৯১৪ বছর আগে ১০৯৮ খ্রিস্টাব্দের এমন দিনে ইউরোপ থেকে আসা খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা সিরিয়ার ‘মারাত আন নুমান’ শহরে বিশ হাজারেরও বেশি মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছিল। যুদ্ধ না করে শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করলে তাদের নিরাপত্তা দেয়া হবে বলে ক্রুসেডাররা ওই মুসলমানদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তারা ওই মুসলমানদের শুধু হত্যাই করেনি, এমনকি হত্যার পর তাদের লাশও খেয়েছিল।
প্রথম ক্রুসেডের ইতিহাস লেখার জন্য খ্যাত পশ্চিমা ঐতিহাসিক ফুলশার অব সারট্রেস এই বর্বরতা সম্পর্কে লিখেছেন: আমি কম্পিত হচ্ছি এটা জানাতে যে, আমাদের (ইউরোপীয় খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের) অনেকেই ক্ষুধায় তাড়িত হয়ে এতটা উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল যে তারা মৃত মুসলমানদের নিতম্বের মাংস কেটে নিত এবং তা আগুনে ভালভাবে না ঝলসিয়েই অর্থাত আধা-কাঁচা অবস্থায় তাদের বীভতস মুখে রেখে গিলত। #

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন