মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৩

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দুই দশক আজ


বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দুই দশক আজ



ইসলামিক নিউজ ডেস্ক,৬ ডিসেম্বর: ৬ ডিসেম্বর। ২০ বছর আগে আজকের দিনে ভারতের কিছু ধর্মান্ধ উন্মাদের হাতে ধ্বংস হয়েছিল ৪০০ বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ। সেইসঙ্গে ধুলোয় মিশে গিয়েছিল গণতান্ত্রিক ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার অহংকার। হিন্দু ধর্মের আবেগকে কেন্দ্র করে সারা ভারতে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল বিদ্বেষের আগুন; যে আগুনে পুড়ে মরেছিলেন শত শত মানুষ।
সে ঘটনার দুই দশক পরের অযোধ্যা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের বেসরকারি নিউজ চ্যানেল জি নিউজ। এতে বলা হয়েছে, “দাঙ্গার পরেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল ধর্মনগরী অযোধ্যার অর্থনীতি। অশান্তির আশঙ্কায় দিনে দিনে কমেছে পর্যটকের সংখ্যা। তুলসীর মালা বা সাদা পাথরের মূর্তি কিনতে আজ আর ভিড় চোখে পড়ে না দোকানের সামনে। স্বচ্ছল থেকে ক্রমশ সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন এইসব শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। এক সময় পর্যটকরা আসতেন। মন্দির নগরীতে তাঁরা থাকতেন, ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করতেন দেব-দেবীর মূর্তি, তুলসী বা রূদ্রাক্ষের মালা। কিন্তু ৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর সবই অতীত। এখন আর পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় নেই অযোধ্যা। তুলসীর মালা আজও অবশ্য বিক্রি হয় অযোধ্যা শহরের পথের ধারের দোকানে। কিন্তু আগের তুলনায় চাহিদা অনেকটাই কম। তাই ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেককেই গ্রাস করেছে হতাশা।”
জি নিউজের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, “শুধু অযোধ্যায় নয়, ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রভাব পড়ে গোটা ভারতে। ধাক্কা খায় দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি। আজ ২০ বছর পর প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যেই কি সেদিন অযোধ্যায় ধর্মের জিগির তুলেছিল বিজেপি? উত্তর খুঁজছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষই।
দু’দশক পরেও বন্ধ হয়নি কমুণ্ডলের রাজনীতি। গো-বলয়ে তাদের পৃথক অস্তিত্বের লড়াইয়ে বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির ইস্যুকে এখনও জাগিয়ে রাখতে চাইছে। যদিও, তারা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দু’দশক আগের আন্দোলন বর্তমানে অনেকটাই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। রাম মন্দির একসময় ছিল বিজেপির অন্যতম প্রধান ইস্যু। ধর্মের ভিত্তিতে ভোটারদের মেরুকরণ ঘটানোর উদ্দেশ্যও অনেকটাই সফল হয়েছিল। মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণের উন্মাদনা উস্কে দিয়ে একসময় যে তারা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছিল, তা মেনে নিচ্ছে বিজেপি।”
জি নিউজের বাংলা চ্যানেল ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, “অযোধ্যা বদলে যাচ্ছে। কিন্তু,রাষ্ট্র যারা চালান,তাদের মনে ভয় দূর হয়নি। হঠাৎ করে যদি জ্বলে ওঠে অশান্তির আগুন? তাই সর্বত্র নিরাপত্তার কড়াকড়ি। ভারী বুটের শব্দ। বিতর্কিত জমির চারপাশে পাঁচিল। অসংখ্য নিরাপত্তারক্ষী। জমি থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘোষিত হয়েছে ইয়োলো জোন। এই এলাকায় ঢুকতে গেলে পেরোতে হবে ব্যারিকেডের বাধা।
ধর্মের জিগির তুলে সেদিন যারা ধ্বংসের খেলায় মেতেছিলেন সময়ের সঙ্গে তাদের অনেকেই মত বদলেছেন। বিতর্কিত জমিও আদালতের বিচারধীন। তবু, আজও চলছে মন্দিরের জন্য পাথর খোদাইয়ের কাজ। কিন্তু কেন? সবই রাজনীতি,বলছে অযোধ্যা। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগে ১৯৯০ সালে শিলান্যাস হয়েছিল রামমন্দিরের। সে সময় দেশজুড়ে প্রচারে নেমেছিল বিজেপি ও ভিএইচপি। রামমন্দির সমর্থকদের প্রত্যেককে একটি করে ইট সঙ্গে আনার আহ্বান জানানো হয়। সারাদেশ থেকে রামমন্দির সমর্থকদের বয়ে আনা ইট স্তুপাকারে জমতে থাকে বিতর্কিত জমির আশেপাশে। শুধু ইট নয়, মন্দির তৈরির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাজস্থান থেকে আনা হয় পাথর। আসেন খোদাই শিল্পীরাও। মন্দিরের জন্য তৈরি হয় অসংখ্য স্তম্ভ। সেই স্তম্ভের গায়ে এখন শুধুই শ্যাওলার পুরু আস্তরণ।
অযোধ্যায় বহু শতাব্দী ধরে পাশাপাশি শান্তিতে বাস করেছিল দুই সম্প্রদায়। কোনওরকম বিরোধ ছাড়াই। সেই কালো শুক্রবারেও সম্প্রীতির বন্ধন ছিল অটুট। তাহলে কী করে রাতারাতি বদলে গেল সেই শান্তির পরিবেশ? অযোধ্যাবাসীর ধারণা, এর পেছনে কাজ করেছিল গভীর কোনো ষড়যন্ত্র। তবে কুড়ি বছর আগের সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি আর নেই। ধীরে ধীরে ফিরে এসেছে শান্তি। ফিরেছে সম্প্রীতি। মসজিদের দাবি ছাড়েননি মুসলিমরা। হিন্দুরাও অনড় তাদের মন্দিদের দাবিতে। তবে এই সমস্যার এখন আইনি সমাধানই চায় দুই সম্প্রদায়। আরেকটা কালো শুক্রবার চান না অযোধ্যাবাসী।” সূত্র: আইআরআইবি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন