৯১৬ বছর আগে এ দিনে মুসলমানদের হাতে বিধ্বস্ত হয়েছিল ক্রুসেডাররা
ইসলামিকনিউজ ডেস্ক, ২২ অক্টোবর : আজ হতে ৯১৬ বছর আগে খ্রিস্টীয় ১০৯৬ সালের এ দিনে ( ৫ ই জ্বিলহজ্ ) এশিয়া মাইনর বা তুরস্কের রুম অঞ্চলের সেলজুক সুলতানের হাতে পরাজিত ও বিধ্বস্ত হয়েছিল পশ্চিম ইউরোপের খ্রিস্টান ক্রুসেডার বাহিনী।
ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও আরো কয়েকটি অঞ্চলের গুণ্ডা, ডাকাত ও খুনিদের নিয়ে গঠিত ৪০ হাজার ক্রুসেড-সেনা কথিত ধর্ম-যুদ্ধের নামে সন্ত্রাসী যুদ্ধ-যাত্রা শুরু করে। তারা (আধুনিক তুরস্ক-সংলগ্ন) বাইজান্টাইন অঞ্চলের পথে পথে ডাকাতি, হত্যাযজ্ঞ, লুট-পাট ও ছিনতাই করার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তারা নিজেদের ফিলিস্তিনের তীর্থযাত্রী বলে অভিহিত করত।
মূলত বেশ কয়েক বছর ধরে ফ্রান্স ও জার্মানিতে দুর্ভিক্ষ, খরা ও প্লেগ মহামারির মত নানা দুর্যোগের কারণেই অর্থনৈতিক সংকট এড়ানোর জন্য এ ধরনের একটি অভিযানে বের হয়েছিল পাশ্চাত্যের ধর্মান্ধ ও বর্বর এইসব লোক।
১০৯৬ সালের এপ্রিল মাসে তারা সন্ত্রাসী যুদ্ধ-যাত্রা শুরু করেছিল পূর্ব দিকে। তাদের হত্যাকাণ্ডের প্রথম শিকার হয়েছিল ইহুদিরা। ইহুদিরা খ্রিস্টানদের মধ্যে নিরাপদে থাকতে পারবে ভেবে খ্রিস্টানদের মধ্যে বসবাস করছিল। ক্রুসেডারদের গণহত্যায় নিহত হয়েছিল শিশু ও নারীসহ চার হাজার ইহুদি। বাদ-বাকি ইহুদিদের একদল আত্মহত্যা করে এবং অন্যদেরকে জোর করে খ্রিস্টান করা হয়। এরপর ক্রুসেডাররা হাঙ্গেরির চার হাজার খ্রিস্টানকে হত্যা করে। হাঙ্গেরি তখন ছিল বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অংশ। ফলে বাইজান্টাইন সম্রাটের সেনারা দশ হাজার সন্ত্রাসী ক্রুসেডারকে হত্যা করে। বাইজান্টাইনরা এরপর তুর্কিদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডারদের ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেয়। তারা জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির ত্রিশ হাজার ক্রুসেডারকে এশিয়া মাইনর অঞ্চলে নিয়ে যায়। বর্তমান তুরস্কের দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের ড্রাকন নামক গ্রামের কাছে মুসলিম প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ক্রুসেডারদের। যুদ্ধে ক্রুসেডাররা প্রায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। যারা বন্দী হওয়ার পর বেঁচে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে সুলতান খিলিজি আরসালান তাদের মুসলমান হওয়ার শর্তে প্রাণ ভিক্ষা দেন এবং তাদেরকে উত্তর-পূর্ব ইরানের খোরাসান অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন।
অবশ্য এক বছর পর (১০৯৭ খ্রিস্টাব্দে) আজকের এই দিনটিতে অভিজ্ঞ ও খ্যাতনামা খ্রিস্টান যোদ্ধারা গডফ্রে, বোহিমান্ড ও চতুর্থ রেয়মন্ড-এর যৌথ নেতৃত্বে প্রথমবারের মত মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুসংঘটিত ক্রুসেড শুরু করে। তারা বর্তমান তুরস্কে অবস্থিত ততকালীন সিরিয়ার এন্টিয়ক শহরটির ওপর অবরোধ শুরু করেছিল এই দিনে।
এশিয়া মাইনর অঞ্চলের সেলজুক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পশ্চিম ইউরোপের খ্রিস্টানদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন ততকালীন বাইজান্টাইন সম্রাট অ্যালেক্সিওস। ক্যাথলিক ইউরোপের প্রধান ধর্মগুরু দ্বিতীয় পোপ আরবান এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন।
সম্মিলিত খ্রিস্টান বাহিনীর সুসংঘটিত ক্রুসেডাররা আকস্মিকভাবে মুসলমানদের ওপর হামলা চালিয়ে এন্টিয়ক অবরোধ করে। আট মাস পর এ শহরের পতন ঘটে ক্রুসেডারদের কাছে। তুর্কি যোদ্ধাদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই ছিল এই বিপর্যয়ের মূল কারণ। তারা ভেবেছিল এরা সেই প্রথম ক্রুসেড-সেনাদের মতই অদক্ষ ও সরল কৃষক শ্রেণীর লোক। ক্রুসেডাররা দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে ও কয়েকটি শহর দখল করে। ১০৯৯ সালে তারা মুসলমানদের প্রথম কিবলা অধ্যুষিত বায়তুল মোকাদ্দাস শহরটি অবরোধ করে। সে সময়ে এই শহর ছিল মিশরের ফাতেমিয় শাসকদের আওতাধীন। ফাতেমিয়রা ছিল ইসমাইলি শিয়া। ক্রুসেডাররা শিশু ও নারীসহ ৭০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করেছিল। এ ছাড়াও তারা স্থানীয় খ্রিস্টান ও ইহুদি সম্প্রদায়ের অনেক মানুষকেও হত্যা করেছিল। (সূত্র-রেডিও তেহরান)##
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন