কুরাইশদের আপোসের ফরমূলা এবং রসূলুল্লাহ (সা) এর উত্তর

মক্কায় এমন এক যুগ ছিল যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইবসলামী
দাওয়াতের বিরুদ্ধে
কুরাইশদের মুশরিক সমাজে প্রচণ্ড বিরোধিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সা) কোন না কোন প্রকার
আপোস করতে উদ্বুদ্ধ করা যাবে বলে কুরাইশ সরদাররা মনে করতো। এ ব্যাপারে তারা তখনো নিরাশ হয়নি। এ জন্য তারা
মাঝে মধ্যে তাঁর কাছে আপোসের ফরমূলা নিয়ে হাযির হতো। তিনি তার মধ্য থেকে কোন একটি প্রস্তাব মেনে
নিলেই তাঁর ও তাদের মধ্যকার ঝগড়া মিটে যাবে
বলে তারা মনে করতো । হাদীসে এ সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন , কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললো : আমরা
আপনাকে এত বেশী পরিমাণ ধন- সম্পদ দেবো যার ফলে আপনি মক্কার সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তি হয়ে যাবেন। যে
মেয়েটিকে আপনে পছন্দ করবেন তার সাথে আপনার বিয়ে দিয়ে দেবো। আমরা আপনার পিছনে চলতে প্রস্তুত । আপনি শুধু
আমাদের একটি কথা মেনে নেবেন --- আমাদের
উপাস্যদের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকবেন। এ প্রস্তাবটি আপনার পছন্দ না হলে আমরা আর একটি প্রস্তাব
পেশ করছি। এ প্রস্তাবে আপনার লাভ এবং আমাদেরও লাভ। রসূলুল্লাহ (সা) জিজ্ঞেস করেন , সেটি কি ? এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদাত করবেন এবং আমরাও এক বছর আপনার উপাস্যদের ইবাদাত করবো।
রসূলুল্লাহ (সা) বলেন , থামো ! আমি দেখি আমার রবের পক্ষ থেকে কি হুকুম আসে। * এর ফলে অহী নাযিল হয় :
“ ওদের বলে দাও , হে মূর্খের দল
! তোমরা কি আমাকে বলছো , আল্লাহ ছাড়া
আমি আর কারো ইবাদাত করবো ? ” ইবনে আব্বাসের (রা) অন্য একটি রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে , কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললো :“ হে মুহাম্মাদ ! যদি তুমি আমাদের উপাস্য মুর্তিগুলোকে চুম্বন করো তাহলে আমরা তোমার
মাবুদের ইবাদাত করবো। ” একথায় কাফিরূন
সূরাটি নাযিল হয়। ( আবদ ইবনে হুমাইদ )
* এর মানে যে , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সল্লাম এ প্রস্তাবটিকে কোন পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য তো দূরের কথা প্রণিধানযোগ্য মনে করেছিলেন । এবং (
নাউযুবিল্লাহ ) কাফেরদেরকে এ আশায় এ জবাব দিয়েছিলেন
যে , হয়তো আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি গৃহীত হয়ে যাবে। বরং একথাটি আসলে ঠিক এমন
পর্যায়ের ছিল যেমন কোন অধীনস্থ অফিসারের সামনে কোন অবাস্তব দাবী পেশ করা হয় এবং তিনি জানেন সরকারের পক্ষে এ
ধরনের দাবী গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কিন্তু এ সত্ত্বেও তিনি নিজে স্পষ্ট ভাষায় অস্বীকার করার পরিবর্তে
দাবী পেশকরীদেরকে বলেন , আমি আপনাদের আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে
দিচ্ছি , সেখান থেকে যা কিছু জবাব আসবে তা
আপনাদের জানিয়ে দেবো। এর ফলে যে প্রতিক্রিয়াটি হয় সেটা হচ্ছে এই যে , অধীনস্থ অফিসার নিজে অস্বীকার করলে লোকেরা বরাবর পীড়াপীড়ি করতে ও চাপ দিতেই থাকবে , কিন্তু যদি তিনি জানিয়ে দেন , ওপর থেকে কর্তৃপক্ষের যে জবাব এসেছে তা তোমাদের দাবীর বিরোধী তাহলে
লোকেরা হতাশ হয়ে পড়বে।
আবুল বখতরীর আযাদকৃত গোলাম সাঈদ ইবনে মীনা রেওয়ায়াত করেন , অলীদ ইবনে মুগীরাহ , আস ইবনে ওয়ায়েল , আসওয়াদ ইবনুল মুত্তালিব ও উমাইয়া ইবনে খালফ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাত
করে বলে : “ হে মুহাম্মাদ ! এসো আমরা তোমার মাবুদের ইবাদাত করি এবং তুমি আমাদের
মাবুদদের ইবাদাত করো। আর আমাদের সমস্ত কাজে আমরা তোমাকে শরীক করে নিই। তুমি যা এনেছো তা যদি আমাদের
কাছে যা আছে তার চেয়ে ভালো হয় তাহলে আমরা তোমার সাথে তাতে শরীক হবো এবং তার মধ্য থেকে নিজেদের অংশ
নিয়ে নেবো। আর আমাদের কাছে
যা আছে তা যদি তোমার কাছে যা আছে তার চাইতে ভালো হয় , তাহলে তুমি আমাদের সাথে তাতে শরীক হবে এবং তা থেকে নিজের অংশ নেবে। ” একথায় মহান আল্লাহ এ আল কাফেরুন সূরাটি নাযিল করেন। ( ইবনে জারীর ও ইবনে আবী
হাতেম । ইবনে হিশামও সীরাতে এ ঘটনাটি উদ্ধৃত করেছেন। )
ওহাব ইবনে মুনাব্বাহ রেওয়ায়াত করেন , কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলে , যদি আপনি পছন্দ করেন তাহলে এই বছর আমরা আপনার দীনে
প্রবেশ করবো এবং এক বছর
আপনি আমাদের দীনে প্রবেশ করবেন। ( আবদ ইবনে হুমাইদ ও ইবনে আবী হাতেম ।)
এসব রেওয়ায়াত থেকে জানা যায় , একবার একই মজলিসে নয় বরং বহুবার বহু মজলিসে কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
সামনে এ প্রস্তাব পেশ করেছিল। এ কারণে একবার সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন জবাব দিয়ে তাদের এ আশাকে
চিরতরে নির্মূল করে দেয়ার প্রয়োজন ছিল। কিছু
দাও আর কিছু নাও -- এ নীতির ভিত্তিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দীনের
ব্যাপরে তাদের কোন চুক্তি ও আপোশ করবেন না , একথা তাদেরকে
জানিয়ে দেয়া একান্ত জরুরী ছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন