নবী করীমের (সা) ওপর যাদুর প্রভাব
হাদীস থেকে জানা যায় , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর যাদু করা হয়েছিল। তার প্রভাবে তিনি অসুস্থ হয়ে
পড়েছিলেন। এ যাদুর প্রভাব দূর করার জন্য জিব্রীল আলাইহিস সালাম এসে তাঁকে সূরা ফালাক ও নাছ পড়ার
নির্দেশ দিয়েছিলেন ।
বিভিন্ন হাদীসে এর যে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে সেগুলো একত্র করে এবং একসাথে গ্রথিত ও সুসংবদ্ধ
করে সাজিয়ে গুছিয়ে আমরা এখানে একটি ঘটনা আকারে তুলে ধরছি।
হোদায়বিয়ার সন্ধির পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম মদীনায় ফিরে
এলেন। এ সময় সপ্তম হিজরীর মহররম মাসে খয়বর
থেকে ইহুদীদের একটি প্রতিনিধি দল মদীনায় এলো। তারা আনসারদের বনি যুরাইক গোত্রের বিখ্যাত যাদুকর লাবীদ
ইবনে আ’সমের সাথে সাক্ষাত করলো। ১ তারা তাকে বললো , মুহাম্মাদ (সা) আমাদের সাথে যা কিছু করেছেন তা তো তুমি জানো। আমরা তাঁর ওপর অনেকবার
যাদু করার চেষ্টা করেছি , কিন্তু সফল হতে পারেনি। এখন তোমার কাছে এসেছি। কারণ
তুমি আমাদের চাইতে বড় যাদুকর। তোমার জন্য এ তিনটি আশরাফী ( স্বর্ণ মুদ্রা ) এনেছি। এগুলো গ্রহণ করো
এবং মুহাম্মাদের ওপর একটি শক্ত যাদুর আঘাত হানো। এ সময় একটি ইহুদী ছেলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে
কাজ করতো। তার সাথে যোগসাজশ করে তারা রসূলুল্লাহ (সা) চিরুনীর একটি টুকরা সংগ্রহ করতে সক্ষম হলো। তাতে
তাঁর পবিত্র চুল আটকানো ছিল সেই চুলগুলো ও চিরুনীর দাঁতের ওপর যাদু করা হলো । কোন কোন বর্ণনায় বলা
হয়েছে , লাবীদ ইবনে আ’সম নিজেই যাদু করেছিল। আবার কোন কোন বর্ণনায় বলা হয়েছে -- তার বোন ছিল তার
চেয়ে বড় যাদুকর । তাদের সাহায্যে সে যাদু
করেছিল যাহোক এ দু’টির মধ্যে যে কোন একটিই সঠিক হবে। এ ক্ষেত্রে এ যাদুকে একটি পুরুষ
খেজুরের ছাড়ার আবরণের ২ নিচে রেখে লাবীদ তাকে বনী যুরাইকের যারওয়ান বা যী -আযওয়ান নামক কূয়াল তলায় একটি পাথর
চাপা দিয়ে রাখলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের ওপর প্রভাব পড়তে পূর্ণ এক বছর সময় লাগলো। বছরের শেষ ছয় মাসে মেজাজে কিছু পরিবর্তন
অনুভূত হতে থাকলো। শেষ চল্লিশ দিন কঠিন এবং শেষ তিন দিন কঠিনতর হয়ে গেলো। তবে এর সবচেয়ে বেশী যে প্রভাব
তাঁর ওপর পড়লো তা কেবল
এতটুকুই যে , দিনের পর দিন তিনি রোগা ও নিস্তেজ হয়ে
যেতে লাগলেন। কোন কাজের ব্যাপারে মনে করতেন , করে ফেলেছেন অথচ তা করেননি। নিজের স্ত্রীদের সম্পর্কে মনে করতেন , তিনি তাদের কাছে গেছেন অথচ আসলে তাদের কাছে যাননি। আবার
কোন কোন সময় নিজের দৃষ্টির
ব্যাপারেও তাঁর সন্দেহ হতো। মনে করতেন কোন জিনিস দেখেছেন অথচ আসলে তা দেখেননি। এসব প্রভাব তাঁর নিজের
ব্যক্তিসত্তা পর্যন্তই সীমাদ্ধ ছিল। এমনকি তাঁর ওপর দিয়ে কি ঘটে যাচ্ছে তা অন্যেরা জানতেও
পারেনি। কিন্তু নবী হিসেবে তাঁর ওপর যে দায়িত্ব
ও কর্তব্য বর্তায় তার মধ্যে সামান্যতম ব্যাঘাতও
সৃষ্টি হতে পারেনি। কোন একটি বর্ণনায়ও একথা বলা হয়নি যে , সে সময় তিনি কুরআনের কোন আয়াত ভুলে গিয়েছিলেন । অথবা কোন আয়াত ভুল পড়েছিলেন। কিংবা
নিজের মসলিসে , বক্তৃতায় ও ভাষণে তাঁর শিক্ষাবলীতে কোন পার্থক্য সূচিত
হয়েছিল। অথবা এমন কোন কালাম তিনি অহী হিসেবে পেশ করেছিলেন যা আসলে তাঁর ওপর নাযিল হয়নি। কিংবা তাঁর কোন
নামায তরফ হয়ে গেছে এবং সে সর্ম্পকে তিনি মনে করেছেন যে , তা পড়ে নিয়েছেন অথচ আসলে তা পড়েননি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন