মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১২

আসহাবে কাহফের ঘটনা বা গুহাবাসীদের ঘটনা

আসহাবে কাহফের ঘটনা বা গুহাবাসীদের ঘটনা

আসহাবে কাহফের ঘটনাটি ঘটে আফসোস (Ephesus ) নগরীতে । খৃষ্টপূর্ব প্রায় এগারো শতকে এ নগরীটির পত্তন হয় । পরবর্তীকালে এটি মূর্তিপূজার বিরাট কেন্দ্রে পরিণত হয় । এখানকার লোকেরা চাঁদ বিবির পূজা করতো । তাকে বলা হতো ডায়না ( diana ) এর সুবিশাল মন্দিরটি প্রাচীন যুগের দুনিয়ার অত্যাশ্চর্য বিষয় বলে গণ্য হতো । এশিয়া মাইনরের লোকেরা তার পূজা করতো । রোমান সাম্রাজ্যেও তাকে উপাস্যদের মধ্যে শামিল করে নেয়া হয়
 
হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের পর যখন তাঁর দাওয়াত রোম সাম্রাজ্যে পৌঁছুতে শুরু করে তখন এ শহরের কয়েকজন যুবকও শিরক থেকে তাওবা করে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে । খৃষ্টীয় বর্ণনাবলী একত্র করে তাদের ঘটনার যে বিস্তারিত বিবরণ গ্রেগরী অব টুরস ( (Gregory of tours )তাঁর গ্রন্থে ( Meraculorum liber) বর্ণনা করেছেন তার সংক্ষিপ্তসার নিম্নরূপ

তারা ছিলেন সাতজন যুবক । তাদের ধর্মান্তরের কথা শুনে কাইজার ডিসিয়াস তাদের নিজের কাছে ডেকে পাঠান । তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের ধর্ম কি ৷ তারা জানতেন, কাইজার ঈসার অনুসারীদের রক্তের পিপাসু । কিন্তু তারা কোন প্রকার শংকা না করে পরিস্কার বলে দেন, আমাদের রব তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশের রব । তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদকে আমারা ডাকি না । যদি আমরা এমনটি করি তাহলে অনেক বড় গুনাহ করবো । কাইজার প্রথমে ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন, তোমাদের মুখ বন্ধ করো, নয়তো আমি এখানেই তোমাদের হত্যা করার ব্যবস্থা করবো তারপর কিছুক্ষণ থেকে বললেন, তোমরা এখনো শিশু । তাই তোমাদের তিনদিন সময় দিলাম । ইতিমধ্যে যদি তোমরা নিজেদের মত বদলে ফেলো এবং জাতির ধর্মের দিকে ফিরে আসো তাহলে তো ভাল, নয়তো তোমাদের শিরশ্ছেদ করা হবে ।

" এ তিন দিনের অবকাশের সুযোগে এ সাতজন যুবক শহর ত্যাগ করেন । তারা কোন গুহায় লুকাবার জন্য পাহাড়ের পথ ধরেন । পথে একটি কুকুর তাদের সাথে চলতে থাকে । তারা কুকুরটাকে তাদের পিছু নেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য বহু চেষ্টা করেন । কিন্তু সে কিছুতেই তাদের সংগ ত্যাগ করতে রাযী হয়নি । শেষে একটি বড় গভীর বিস্তৃত গুহাকে ভাল আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়ে তারা তার মধ্যে লুকিয়ে পড়েন । কুকুরটি গুহার মুখে বসে পড়ে । দারুন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত থাকার কারণে তারা সবাই সংগে সংগেই ঘুমিয়ে পড়েন । এটি ২৫০ খৃষ্টাব্দের ঘটনা । ১৯৭ বছর পর ৪৪৭ খৃষ্টাব্দে তারা হঠাৎ জেগে উঠেন । তখন ছিল কাইজার দ্বিতীয় থিয়োডোসিসের শাসনামল । রোম সাম্রাজ্য তখন খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং আফসোস শহরের লোকেরাও মূর্তিপূজা ত্যাগ করেছিল । "
 
" এটা ছিল এমন এক সময় যখন রোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে মৃত্যু পরের জীবন এবং কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে জমায়েত ও হিসেব নিকেশ হওয়া সম্পর্কে প্রচণ্ড মতবিরোধ চলছিল । আখেরাত অস্বীকাররের ধারণা লোকদের মন থেকে কিভাবে নির্মূল করা যায় এ ব্যাপারটা নিয়ে কাইজার নিজে বেশ চিন্তিত ছিলেন । একদিন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যেন তিনি এমন কোন নিদর্শন দেখিয়ে দেন যার মাধ্যমে লোকেরা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে । ঘটনাক্রমে ঠিক এ সময়েই এ যুবকরা ঘুম থেকে জেগে ওঠেন । "
 
" জেগে ওঠেই তারা পরস্পরকে জিজ্ঞস করেন, আমরা কতক্ষণ ঘুমিয়েছি ৷ কেউ বলেন একদিন, কেউ বলেন দিনের কিছু অংশ । তারপর আবার একথা বলে সবাই নীরব হয়ে যান যে এ ব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন । এরপর তারা জীন (Jean ) নামে নিজেদের একজন সহযোগীকে রূপার কয়েকটি মুদ্রা দিয়ে খাবার আনার জন্য শহরে পাঠান । লোকেরা যাতে চিনতে না পারে এ জন্য তাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন । তারা ভয় করছিলেন, লোকেরা আমাদের ঠিকানা জানতে পারলে আমাদের ধরে নিয়ে যাবে এবং ডায়নার পূজা করার জন্য আমাদের বাধ্য করবে । কিন্তু জীন শহরে পৌঁছে সবকিছু বদলে গেছে দেখে অবাক হয়ে যান । তিনি দেখেন সবাই ঈসায়ী হয়ে গেছে এবং ডায়না দেবীর পূজা কেউ করছে না । একটি দোকানে গিয়ে তিনি কিছু রুটি কিনেন এবং দোকনদারকে একটি রূপার মুদ্রা দেন । এ মুদ্রার গায় কাইজার ডিসিয়াসের ছবি ছাপানো ছিল । দোকানদার এ মুদ্রা দেখে অবাক হয়ে যায় । সে জিজ্ঞস করে, এ মুদ্রা কোথায় পেলে ৷ জীন বলে এ আমার নিজের টাকা, অন্য কোথাও থেকে নিয়ে আসিনি । এ নিয়ে দু'জনের মধ্যে বেশ কথা কাটাকাটি হয় । লোকদের ভীড় জমে ওঠে । এমন কি শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নগর কোতায়ালের কাছে পৌঁছে যায় । কোতোয়াল বলেন, এ গুপ্ত ধন যেখান থেকে এনেছো সেই জায়গাটা কোথায় আমাকে বলো । জীন বলেন,কিসের গুপ্ত ধন ৷ এ আমার নিজের টাকা । কোন গুপ্তধনের কথা আমার জানা নেই । কোতোয়াল বলেন, তোমার একথা মেনে নেয়া যায় না । কারণ তুমি যে মুদ্রা এনেছো, এতো কয়েক শো বছরের পুরানো । তুমি তো সবেমাত্র যুবক, আমাদের বুড়োরাও এ মুদ্রা দেখেনি ।
 
নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন রহস্য আছে । জীন যখন শোনেন কাইজার ডিসিয়াস মারা গেছে বহুযুগ আগে তখন তিনি বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন । কিছুক্ষণ পর্যন্ত তিনি কোন কথাই বলতে পারেন না । তারপর আস্তে আস্তে বলেন, এ তো মাত্র কালই আমি এবং আমার ছয়জন সাথী এ শহর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম এবং ডিসিয়াসের জুলুম থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলাম । জীনের একথা শুনে কোতোয়ালও অবাক হয়ে যান । তিনি তাকে নিয়ে যেখানে তার কথা মতো তারা লুকিয়ে আছেন সেই গুহার দিকে চলেন । বিপুল সংখ্যক জনতাও তাদের সাথী হয়ে যায় । তারা যে যথাযর্থই কাইজার ডিসিয়াসের আমলের লোক সেখানে পৌঁছে এ ব্যাপারটি পুরোপুরি প্রমাণিত হয়ে যায় । এ ঘটনার খবর কাইজার ডিসিয়াসের কাছেও পাঠানো হয । তিনি নিজে এসে তাদের সাথে দেখা করেন এবং তাদের থেকে বরকত গ্রহণ করেন । তারপর হঠাৎ তারা সাতজন গুহার মধ্যে গিয়ে সটান শুয়ে পড়েন এবং তাদের মৃত্যু ঘটে । এ সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখে লোকেরা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন